মাদক চক্রে জড়িয়ে পড়েছে
অনেক জনপ্রতিনিধি,
মাদক বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের,
মোঃ আফতাবুল আলম রাজশাহী।
রাজশাহী জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা ও পবা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সর্বত্র মাদকের হাতছানি। আগের চেয়ে এখন মাদকের গডফাদাররা আরও বেপরোয়া। বিস্ময়কর হলো মাদকচক্রে জড়িয়ে পড়েছে অনেক জনপ্রতিনিধি। সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত বহু মামলার চিহ্নিত মাদক কারবারি ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসনের মাথাব্যথা নেই। সীমান্ত এলাকায় রাখঢাক না রেখেই মাদকের কেনা-বেচা চলছে। কখনও কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকারও হচ্ছে। স্থানীয়রা দাবি জানিয়ে বলেছেন, মাদক কারবারিদের শায়েস্তার কোনো বিকল্প নেই। চমকপ্রদ তথ্য হলো, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে রাজশাহীতে মাদক ঢুকলেও তা উদ্ধারে বিজিবি পিছিয়ে আছে। জানা গেছে, গোদাগাড়ীর চরাঞ্চল, চারঘাটের রাওথা, পিরোজপুর, ডালিপাড়া, গোপালপুর, মোক্তারপুর, গৌরশহরপুর, ইউসুফপুর, টাঙ্গন, শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী স্টেশন, চামটা, নন্দনগাছী স্টেশন, পুঠিমারী এলাকার বিভিন্ন এলাকা, বাঘার মীরগঞ্জ, ভানুকর, আতারপাড়া, হরিরামপুর, মহাজনপাড়া, আলাইপুর, নারায়ণপুর সড়ক ঘাট, পবার চর খিদিরপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ, মাদারপুর, মহিষালবাড়ি, বকচর, সুলতানগঞ্জ, সারেংপুর, কুদালকাটি, রেলগেট বাইপাস ও সিঅ্যান্ডবি এলাকায় মাদকের রমরমা অবস্থা। এসব এলাকায় ব্যাপকভাবে বেড়েছে ফেনসিডিল, হেরোইন, গাজা, ইয়াবা সরবরাহ ও সেবন। চোরাকারবারিরা ভারত থেকে এসব মাদক দেশে নিয়ে আসছে। ভারতীয় সীমান্তের চর এলাকা দিয়ে রাজশাহীতে মাদক ঢোকানো হয়। এরপর তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাদক উদ্ধারে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি অন্যসব বাহিনীর তুলনায় পিছিয়ে আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গত জানুয়ারিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হোরোইন উদ্ধার করেছে ২৫.৫ গ্রাম, ফেনসিডিল ৫০ বোতল, গাঁজা ৮ কেজি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ২১৩ পিস। জেলা পুলিশ আগের চেয়ে এখন মাদকের গডফাদাররা আরও বেপরোয়া। বিস্ময়কর হলো মাদকচক্রে জড়িয়ে পড়েছে অনেক জনপ্রতিনিধি হেরোইন উদ্ধার করেছে ৪৯৫ গ্রাম, ফেনসিডিল ৬৬৬ বোতল, গাঁজা ১২ কেজি ১৪০ গ্রাম ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৮৫৭ পিস। মহানগর পুলিশ হেরোইন ৪৪.১০ গ্রাম, ফেনসিডিল ৪৫ বোতল, ইয়াবা ৮৮ পিস ও গাঁজা উদ্ধার করেছে ৪ কেজি ৮৯৬ গ্রাম। ফেব্রুয়ারিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হোরোইন উদ্ধার করেছে ৩৫.৫ গ্রাম, ফেনসিডিল ১৬ বোতল, গাঁজা ৬২ কেজি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৬০০ পিস। জেলা পুলিশ হেরোইন উদ্ধার করেছে ১ কোজি ২৮৮ গ্রাম, ফেনসিডিল ১ হাজার ৪৬ বোতল, গাঁজা ২০ কেজি ১০০ গ্রাম ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৪২৩ পিস। মহানগর পুলিশ হেরোইন ১০২.৯৫ গ্রাম, ফেনসিডিল ১৫৮ বোতল, ইয়াবা ২৬১ পিস ও গাঁজা উদ্ধার করেছে ২৫ কেজি ৮৯৩ গ্রাম। মার্চে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হোরোইন উদ্ধার করেছে ৫২.২৫ গ্রাম, কোনো ফেনসিডিল উদ্ধারে সক্ষম হয়নি। অবশ্য গাঁজা ৩৬ কেজি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৪১ পিস। জেলা পুলিশ হেরোইন উদ্ধার করেছে ৫ কোজি ১১৯ গ্রাম, ফেনসিডিল ৪৮২ বোতল, গাঁজা ৬ কেজি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে ১৬২২ পিস। মহানগর পুলিশ হেরোইন ৫১ গ্রাম উদ্ধার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের তালিকাভুক্ত একাধিক মাদক মামলার আসামি সম্প্রতি তারা একটি দলের নাম ভাঙিয়ে নেতা পরিচয় দিচ্ছেন এবং এই পরিচয়ের আড়ালে তারা মাদকের রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের হাত ধরে আবার দেশে অস্ত্রও ঢুকছে। এদের আয়ের উৎস শুধুই মাদক ব্যবসা। এ ছাড়াও মাদককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি দালাল চক্র। প্রশাসনের অভিযানে মাদক উদ্ধার ও মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেই দালালরা ত্বরিত ছুটে আসেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত কদিনে অনেক মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।