মিজানুর রহমান,জেলা প্রতিনিধি বগুড়াঃ-
ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজে ব্যবহারযোগ্য দা, ছুরি, ছোরা তৈরিতে এখন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কর্মকাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার দাড়িদহ, গুজিয়া, কিচক, মহাস্থান, মোকামতলা, উথলী ও শিবগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, লোহা পুড়িয়ে তার ওপর ঘা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ধারালো দা-ছুরি-ছোরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কর্মকার পল্লীগুলো।
স্থানীয় এক কর্মকার শিল্পী রমজান আলী ও
নিম্মল কর্মকার বলেন, “সারা বছর তেমন কাজ থাকে না, কিন্তু কোরবানির ঈদ এলেই হিমশিম খেতে হয়। একদম খাওয়ার সময়ও পাই না।” তিনি জানান, এসময় পুরোনো ছুরি-বটিতে শান দেওয়ার পাশাপাশি নতুন চাপাতি, ছোরা ও চাকুর চাহিদাও বেড়ে যায়।জানান, সারা বছরের তুলনায় ঈদুল আজহার আগে অর্ডার ও ক্রেতার চাপ অনেক বেশি থাকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সময় ধরে কাজ করলেও চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে স্প্রিং লোহা (গাড়ির পাত), রেললাইনের লোহা, রড ইত্যাদি। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি চাকু-ছুরি অনেক বেশি টেকসই ও ধারালো হয় বলে এর চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, “দা-ছুরি তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি লেবার খরচও বেশি। তারপরও আমরা আগের দামের কাছাকাছিই বিক্রি করছি, যেন মানুষ কোরবানির জন্য দা-ছুরি সহজে কিনতে পারে।”
এ সময় একাধিক গ্রাহক জানান, বাজারে চাইনিজ ছুরি সস্তা হলেও দেশীয় কর্মকারদের তৈরি দা-ছুরি বেশি টেকসই এবং ধারালো হয় বলে সেগুলোর চাহিদা বেশি।
উপজেলার একাধিক দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছুরি ৮০-১২০ টাকা, মাঝারি দা ২০০-৩০০ টাকা, বড় ছোরা ৪০০-৫০০ টাকা,বটি ২০০-৫০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো ছুরি বা দাতে শান দিতে গুনতে হচ্ছে ৩০-১০০ টাকা।
তবে মান ও আকারভেদে দামের তারতম্য রয়েছে।
কর্মকাররা জানিয়েছেন, ঈদের আগের ৩-৪ দিন সর্বোচ্চ ব্যস্ততা থাকে। অনেক সময় বাড়তি লোক ভাড়া করে রাত জেগে কাজ করতে হয়।
এই ঐতিহ্যবাহী কর্মকার শিল্প এখনো শিবগঞ্জে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা