1. Jahidksb@gmail.com : Jahid Hasan : Jahid Hasan
ডা.নাদেরুজ্জামান খান,সাবেক এমপি,একজন নজিরবিহীন সৎ রাজনীতিবিদ - খবর সকাল বিকাল - Khobor Sokal Bikal    
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নিউইর্য়ক প্রবাসী শিলা”র মা ও লিটনের শাশুড়ি খুরশিদা বেগমের ইন্তেকাল ভাবকী খ্রীষ্টায়ান কেজি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস পার্টির আনন্দঘন আয়োজন থানায় ঢুকে হামলা, আহত পুলিশ সদস্য নান্দাইল রসুলপুর বাণিজ্য বাজার সংলগ্ন কাঁচামাটিয়া নদীর পাশে বর্ষার বৃষ্টিতে পাকা রাস্তা ভাঙন, ঝুঁকিতে যান চলাচল মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের স্মরণে দিনাজপুরে ছাত্র ফ্রন্টের মোমবাতি প্রজ্জ্বলন জয়নগর দুই নম্বর ব্লকের খাদ্যের কর্মদক্ষ ওয়াহিদ মোল্লার উপস্থিতে সাহাজাদাপুর অঞ্চলে “চলো গ্ৰামে যাই, অঞ্চলের আঁচল সভা অনুষ্ঠিত হল গাজায় ১১৫ জন অনাহারে মৃত: আর কত লাশে জাগবে বিশ্ব বিবেক? বোয়ালখালীতে সিফাতের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের জাল প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে রাণীশংকৈলে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের মানববন্ধন বালিয়াকান্দিতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় কুখ্যাত ২ ডাকাত গ্রেপ্তার

ডা.নাদেরুজ্জামান খান,সাবেক এমপি,একজন নজিরবিহীন সৎ রাজনীতিবিদ

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
  • ১৮২ বার পড়া হয়েছে

 

মোহাম্মদ দুদু মল্লিক,শেরপুর:শেরপুর জেলার কৃতি সন্তান ডা.নাদেরুজ্জামান খান ওরফে নাদের ডাক্তার ১৯১৭ সনের ৮ মার্চ তদানিন্তন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার নালিতাবাড়ী থানার অন্তর্গত গৌড়দ্বার গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।তার পিতা মরহুম হাজী সৈয়দ জামান খান,মাতা মরহুম জেলেহা খাতুন। ২০০২ সনের ২০ জুন, ৮৫ বছর বয়সে উনি মৃত্যুবরণ করেন।নাদেরুজ্জামান খান নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর পার্শ্ববর্তী ফুলপুর থানার পয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট থেকে ডাক্তারী পাশ করেন।দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ বা স্বাধীন হবার পর তদানিন্তন স্বাধীনতার পক্ষের তরুন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় রাজনীতি শুরু করলে পরিচয় ঘটে বর্তমান শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের গৌড়দ্বার গ্রামের মেডিকেল ছাত্র নাদেরুজ্জামান খানের সাথে। তাদের দুজনের চেহারায় মিল থাকায় ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। নাদেরুজ্জামান খান তখন পূরানো ঢাকায় ডাক্তারীতে লেখাপড়া করতেন। আর শেখ মুজিবুর রহমান পূরান ঢাকায় থাকতেন।শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ছাত্র রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন নাদের।ডাক্তারি ডিগ্রিপ্রাপ্ত হবার পর শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শে চিকিৎসা বঞ্চিত এলাকাবাসীর সেবা করার লক্ষ্যে নিজ গ্রামে এসে ফার্মেসী স্থাপন করে চিকিৎসা সেবা ও রাজনীতি শুরু করেন। তখন অত্রাঞ্চলে কোন পাশ করা ডাক্তার ছিলো না। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো খুবই নাজুক।যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো নৌকা অথবা গরুর গাড়ী। গরুর গাড়ী চলার রাস্তা ছিলো খুবই কম। পাকিস্তানি যুগে উনি পায়ে হেটে,স্বাধীনতার পর সাইকেল যোগে দূরের রুগী দেখতেন। রুগীর দেখার ফ্রী নিয়ে তার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না। খুশী হয়ে মানুষ যা দিতো তাই নিতেন। গরীব দুঃখী রুগীর জন্য উনি ছিলেন মহামানব।জেলা ও মহকুমা সদর সহ অন্যান্য জায়গায় যোগাযোগের সবচেয়ে কাছের ও কম কষ্টের রেল স্টেশন ছিল পিয়ারপুর। গৌড়দ্বার থেকে হেটে নারায়ন খোলা। নারায়নখোলা থেকে নৌকায় পিয়ারপুর। তারপর যে দিকে খুশী ট্রেনে যাতায়াত করা যেতো। ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান গ্রামে গ্রামে ঘুরে আওয়ামী লীগের প্রচার চালিয়ে সাথী সংগ্রহ করে নকলা থানা আওয়ামী লীগ গঠন করেন। নাদের ডাক্তার নকলা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে ১০ বৎসর সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেছেন।নাদের ডাক্তার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সনের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৬ সনের শাসনতন্ত্র আন্দোলন,১৯৬৬ সনের ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সনের গনঅভ্যুত্থান সহ পাকিস্তান আমলের সকল লড়াই সংগ্রামে আওয়ামী লীগের হয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন।১৯৭০ সনের নির্বাচনে ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান নকলা-নালিতাবাড়ী আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান ১৯৭১ সনে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ও সংগঠক হিসাবে সংগ্রামী ভুমিকা পালন করেন।(সূত্রঃ জাতীয় সংসদের শোক প্রস্তাব)১৯৭৫ সনে ইতিহাসের নির্মম রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের দ্বারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হবার পরবর্তী সময়ে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছিলেন এই নেতা।১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। ১৯৮৬ সনে জোড় পূর্বক তার জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।এলাকাবাসীর লেখাপড়ার সুবিধার্থে ১৯৪০ সালে মাত্র ২৩ বৎসর বয়সে নিজে উদ্যোগী হয়ে,পাড়াপ্রতিবেশি মুরুব্বীদের নেতৃত্বে তাদের পৈত্রিক জমিতে গৌড়দ্বার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়(৮ম শ্রেনী পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ডাক্তার সাহেবের প্রচেষ্টায় উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়।
১৯৭২ সনে নকলা থানা সদরে প্রতিষ্ঠিত হাজী জাল মামুদ কলেজের উনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জমি দান করে গৌড়দ্বার ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্র (হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠায় উনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন।
গৌড়দ্বার বাজারের মসজিদ, মাদ্রাসা নিজস্ব জমিতে এই নেতার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
(সূত্রঃ জাতীয় সংসদের শোক প্রস্তাব,পরিবার ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ)।ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান নম্র,ভদ্র, শান্তিপ্রিয়,নির্বিবাদী ও প্রকৃত জন দরদী একজন নেতা ছিলেন। যার তুলনা খুজে পাওয়া দুষ্কর। কথিত আছে ১৯৮৬ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টির গুন্ডারা কেন্দ্র দখল করে জোড় পূর্বক ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকলে উনি বাড়ী ফেরত যাচ্ছিলেন। কিছু নেতাকর্মী পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেয়।
ওরা অস্ত্রধারী,ওরা ভোট ডাকাত, ওরা ভোটের জন্য মানুষ খুন জখম করতে পারে। একজন মায়ের সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমার কাম্য নয় বলে সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করেছিলেন নাদের ডাক্তার। উক্ত ঘটনা থেকে উনার সততা, শান্তিপ্রিয়তা,নির্বিবাদীতা সহ জনগণের প্রতি ভালোবাসার প্রমান পাওয়া যায়।ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক। সততার সকল মানদণ্ডে উনি ছিলেন অতুলনীয় ও নজিরবিহীন। নকলা-নালিতাবাড়ী তথা শেরপুর জেলা বা বৃহত্তর ময়মনসিংহ দূরে থাক,সমগ্র দেশে তার মত সৎ মানুষ খুজে পাওয়া অসম্ভব।
ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের জার্নালে শেরপুরের শ্রেষ্ঠ কৃতি সন্তান মনোনীত হয়েছিলেন। (সূত্রঃ শোক প্রস্তাব)নাদের ডাক্তারের স্মৃতিচারণে কাছের একবন্ধু আশির দশকে আমি কলেজে পড়ি ট্রেনে যাতায়াত করে প্রতিদিন ক্লাস করতাম। সেই সুবাদে মাঝে মধ্যে নাদের ডাক্তার সাহেবের সাথে যাতায়াতের সৌভাগ্য হয়েছে।এমপি সাহেব সাইকেল চালিয়ে নারায়ন খোলা এসে কোন বাড়ীতে সাইকেল রেখে বর্ষাকালে নৌকায়, শীতকালে হেটে ব্রম্মপুত্র পাড়ি দিতেন।ডাক্তার সাহেব বঙ্গবন্ধুর সাথে তার স্মৃতির বিষয়ে বলেছেন,১। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে এলাকায় এসে ডাক্তারি করা, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া।
২। শেখ মুজিবুর রহমান ও নাদেরুজ্জামান খানের চেহারার সাদৃশ্য থাকায় শেখ মুজিব নাদের কে সাবধানে চলাচল করতে বলতেন। উনি মনে করতেন মুসলিম লীগের পান্ডারা হয়ত নাদেরকে মুজিব ভেবে আক্রমণ করতে পারে,১৯৭০ সনে বঙ্গবন্ধুর পছন্দের প্রার্থী হিসাবে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়া হয়।স্বাধীনতার পর নাদের ডাক্তারকে কাছে ডেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার অনুরোধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।ডাক্তার সাহেব নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। নারীদের উনি মর্যাদাশীল মনে করতেন,উন্নয়নের প্রতীক ভাবতেন।সাবেক এমপি নাদের ডাক্তার সাধারণ বেশভূষার অতি সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। এলাকায় প্রচার আছে উনি একসাথে দুইটা লুঙ্গি পরতেন না বা কিনতেন না। আশির দশকে এ বিষয়ে আমার প্রশ্নের জবাবে উনি বলেছিলেন,একটা লুঙ্গিতেই চলে। গ্রামে অনেকের তাও নেই। আমারতো সাথে গামছা আছে।
ডাক্তার নাদেরুজ্জামান খান নকলা-নালিতাবাড়ীর সব থেকে গুনী,সৎ ও নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার গুনগান কাগজে কলমে শেষ করা যায় না। তার কৃতিত্ব জনমনে লিপিবদ্ধ। আজ এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের মৃত্যু বার্ষিকী। পরকালে তার শান্তির জন্য সবাই আল্লার দরবারে দোয়া করবেন।লেখাটিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ডাক্তার সাহেবের পুত্র কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন খান, মোক্তার,জুয়েল,হীরা,আব্দুল কুদ্দুস মাকহান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© ২০২৪  সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি