কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম মহানগরে-পরোয়ানা নিয়ে ঘুরছে ২৪ হাজার আসামি বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছে পরোয়ানা
তামিল নেই। চট্টগ্রামের ছিনতাইকারী ১৮ মামলার আসামি মো. আলম ওরফে চাকমা আলমের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তার পর কেটে গেছে সাত বছর। এখনও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়নি পেশাদার এ অপরাধী। ১৫ ছিনতাই মামলার আরেক আসামি মান্নান গ্রুপের প্রধান আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু তিনিও ছয় বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিচারকের ওপর হামলার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত কিশোর গ্যাং লিডার আলী আকবর ইকবালের সন্ধান মিলছে না। ২০২১ সালে তার পাঁচ বছর কারাদণ্ড হওয়ার পর সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে লাপাত্তা।তাদের মতো চট্টগ্রাম মহানগরে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ২৩ হাজার ৭৭৬ জন অপরাধীর নামে ঝুলে আছে পরোয়ানা। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অধীন ২১টি আদালত থেকে এগুলো জারি হয়। মহানগরের ১৬ থানা এলাকায় সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত তারা। এর মধ্যে আবার সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী আছে ৭ হাজার ৬৯৫ জন। বিচারাধীন ও তদন্তাধীন মামলার আসামি ১৬ হাজার ৮১ জন। চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে চার থানা এলাকায়। চার থানায়ই জমা পড়ে আছে সাড়ে ১১ হাজার পরোয়ানা। চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, প্রতি মাসে আদালত থেকে যে পরিমাণ ওয়ারেন্ট আসে, ঠিক সেই পরিমাণ তামিল করা হয়। কিন্তু পুরোনো অনেক পরোয়ানা জমে থাকায় এবং অনেক আসামির ঠিকানা জটিলতার কারণে জমা পরোয়ানার সংখ্যা বেশি। কিন্তু প্রতি মাসে অলিগলিতে অভিযান চালিয়ে ১০০ থেকে ২০০ আসামি পরোয়ানামূলে গ্রেপ্তার করেছি।নগরের কর্ণফুলী থানার ওসি মো. শরীফ বলেন, আসামির স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানার দ্বিগুণ অন্তর্ভুক্তি, ভাসমান ঠিকানাসহ নানা কারণে থানায় থানায় ওয়ারেন্ট সংখ্যা বেশি। মেট্রোপলিটন সিটিতে আসামির ভাসসান ঠিকানার কারণে অনেক ওয়ারেন্ট তামিল করা সম্ভব হচ্ছে না। আগের তুলনায় এখন তামিলের সংখ্যা বাড়ার কারণে অপরাধ কমে এসেছে।চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, থানা পুলিশ বহুমুখী কাজের চাপ বেশি থাকায় ওয়ারেন্টের আসামি অনেক সময় ধরার সময় পান না। এ ক্ষেত্রে থানা পুলিশের পরোয়ানা তামিলের জন্য পৃথক একটি সেল ও নির্দিষ্ট ফোর্স থানায় থানায় রাখা হলে পলাতক আসামি বেশি ধরা সম্ভব হবে। ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনায় অভিজ্ঞ আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, পেশাদার অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত নগরে সাধারণ মানুষ তাদের দ্বারা ভিকটিম হচ্ছেন। এ ছাড়া পলাতকরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আদালতে মামলার বিচারও দ্রুত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৬ হাজার ৯১৬ আসামি এবং কোর্টে হওয়া মামলার ৭৭৯ জন পরোয়ানার আসামি লাপাত্তা। থানায় তদন্তাধীন মামলার ১১ হাজার ২২১ জন এবং আদালতে বিচারাধীন মামলার ৪ হাজার ৮৬০ আসামির নামে পরোয়ানা জারি হলেও গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৩ হাজার ৮৩৪টি ওয়ারেন্ট, সদরঘাট থানায় ৪৮৯টি, চকবাজার থানায় ৭৮৫টি, বাকলিয়া থানায় ১ হাজার ৪২৩টি, খুলশী থানায় ১ হাজার ৬৭৩টি, বায়েজিদ থানায় ২ হাজার ১২৮টি, পাঁচলাইশ থানায় ২ হাজার ৪৯১টি, চান্দগাঁও থানায় ১ হাজার ৮৮৩টি, পাহাড়তলী থানায় ৯৬১টি, আকবর শাহ থানায় ৬৭৩টি, হালিশহর থানায় ১ হাজার ৫৫১টি, ডবলমুরিং থানায় ২ হাজার ৯৩৬টি, বন্দর থানায় ৯৯০টি, ইপিজেড থানায় ৫৮৪টি, পতেঙ্গা থানায় ৪৩১টি এবং কর্ণফুলী থানায় ৯৪৪টি পরোয়ানা জমা পড়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে বর্তমানে ৫৫ হাজার ৯৬টি মামলা বিচারাধীন।