দেলোয়ার হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট)প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম নওগাঁ কাঠালী—এই গ্রামেরই এক সংগ্রামী নারী মিনারা বেগম। শুধু সংসার চালানো নয়, বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তিনি। হাঁস পালনের মাধ্যমে তিনি আজ এলাকার পরিচিত ও সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন।
স্বামী ফজলুর রহমান একজন প্রান্তিক কৃষক। তাদের সামান্য জমি, তিন সন্তানের পড়াশোনা ও বিয়ে মিলিয়ে একসময় অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছায়। স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়লে মিনারা বেগম বিকল্প আয়ের পথ খোঁজেন। পাঁচ বছর আগে ভাইয়ের হাঁসের খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে হাঁস পালন শুরু করেন। মাত্র ১৫ হাজার টাকা মূলধনে অস্ট্রেলিয়ান জাতের ৫০০ হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে খামার শুরু করেন তিনি। তিন মাসের ব্যবধানে প্রথম চালানে হাঁস বিক্রি করে পান ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। খরচ বাদে মুনাফা ছিল প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
বর্তমানে তার খামারে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি হাঁস। প্রত্যাশা করছেন এবারের বিক্রয় থেকে লক্ষাধিক টাকার বেশি লাভ হবে। হাঁস পালনের পাশাপাশি পরিবারিক ঋণ শোধ করেছেন, ছোট মেয়ের কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনাও শেষ হয়েছে।
মিনারা জানান, হাঁসের খরচ কমাতে তিনি বাজার থেকে খাবার না কিনে ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠে হাঁস ছেড়ে দেন, যেখানে হাঁসেরা প্রাকৃতিক খাদ্যে বেড়ে ওঠে। এতে খরচ অনেকটাই কমে আসে। হাঁস প্রতিটি ৩৬ টাকা দরে সিরাজগঞ্জের একটি হ্যাচারী থেকে কিনে আনেন এবং ৩ থেকে ৪ মাস লালন-পালনের পর ১৯০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
তবে তিনি জানান, হাঁসের বিভিন্ন রোগ—বিশেষ করে জ্বর, সর্দি ও হাপানির প্রকোপ দেখা দিলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। ওষুধের খরচও বেশি হয়, আর প্রাণিসম্পদ দপ্তর দূরে হওয়ায় তাৎক্ষণিক সেবা পাওয়া কষ্টকর।
মিনারা বেগম ভবিষ্যতে নিজ বাড়িতেই একটি বড় হাঁস খামারের পাশাপাশি একটি হ্যাচারী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। তার খামারের সফলতা দেখে গ্রামের আরও অনেকেই হাঁস পালনের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে নজরুল ইসলাম নামের একজন নতুন খামার শুরু করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী জানান, “মিনারা বেগম আমাদের দপ্তরের সহায়তায় হাঁস পালন করছেন এবং আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। তার মতো আরও অনেক খামারি আমাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন। আমরা নিয়মিত টিকা, চিকিৎসা ও সরকারি সুবিধা দিয়ে খামারিদের পাশে আছি।”
একজন নারীর স্বপ্ন আর সংগ্রাম শুধু নিজের নয়, বদলে দিতে পারে গোটা একটি এলাকার আর্থিক সম্ভাবনার চিত্র। মিনারা বেগম তার বাস্তব উদাহরণ। তিনি এখন শুধু খামারি নন, গ্রামের অনুপ্রেরণাও।