স্টাফ রিপোর্টার:
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানান বেসরকারি এনজিও নারী মৈত্রীর নারী নেত্রীরা। দাবিতে ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তারা।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নারী মৈত্রীর প্রধান কার্যালয়ে “২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নারীর কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ” করণ শির্ষক এক সভায় এ দাবি জানান তারা।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ আবদুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রামস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ।
প্রস্তাবগুলো হলো- সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
মানববন্ধনে নারী নেত্রীরা জানান, টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন। সে হিসেবে প্রতিদিন ৪৪২টি প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে তামাকের কারণে। শুধু তাই নয়, তামাকের ধোয়াঁয় রয়েছে ৭ হাজার টি রাসায়নিক পদার্থ, এর মধ্যে ৭০টি পদার্থ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস, ক্যান্সার, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান।
তারা বলেন, তামাকের কারণে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসরোগ, ক্যান্সার, কিডনি রোগ এবং আঘাতজনিত রোগ ক্রমেই বাড়ছে। আর নারী ও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের নারীদের অকালে গর্ভপাত, অপরিণত শিশুর জন্ম, স্বল্প ওজনের শিশু, গর্ভকালীন রক্তক্ষরণ, প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মৃত শিশুর জন্ম দেয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এফসিটিসির আলোকে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী এখনই পাশ করতে হবে।
আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ধূমপান শুধু যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তা নয়, এটি আর্থিক ক্ষতিরও অন্যতম কারণ। বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনীর খসড়া এখন মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই আইন যত শিগগির পাশ হবে, তত দ্রুত মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে গ্যাটস-২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২ কোটি ২ লাখ এবং ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লাখ। আর পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ।