আব্দুল মজিদ (স্টাফ রিপোর্টার)পাটের সুদিন আবারও ফিরে পেয়েছে সিরাজগঞ্জের কৃষকেরা। বর্তমানে ভালো দাম পেয়ে আবারও পাটের সুদিন ফিরে এসেছে। জেলার কৃষকরাও পাট চাষে মনোযোগী হয়ে উঠছেন। আর এই পাট বিক্রির জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হাট। এরই অংশ হিসাবে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী বেষ্ঠিত কাজিপুরে যমুনার চরে নাটুয়ারপাড়াতে জমে ওঠেছে ভাসমান পাটের হাট।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই পাট কাটা শুরু হয়েছে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে পাটের ফলন জাত ভেদে হয়েছে ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে তোষা, মেস্তা, দেশি জাতের পাট রয়েছে। জমি থেকে পাট কাটা ও ধোয়ার পর শুরু হয়েছে পাট বাজারজাতকরণ।
জানা গেছে, কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের জমিতে উৎপাদিত পাট বিক্রয় করতে এবং আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে এ হাটে নিয়ে আসে পাট চাষিরা। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। নাটুয়াপাড়া হাটটি সপ্তাহে দুুইদিন শনিবার ও বুধবার সকালে পাটের হাট বসে। যমুনা চরে পাটের উৎপাদন ও মান ভালো হওয়ায় ব্যাপারী ও ক্রেতাদের হাঁক ডাকে জমে উঠছে বেচাকেনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নাটুয়াপাড়া হাটে যমুনা নদীর পাড়ে নৌকার ওপরে জমে উঠেছে পাট বেচা-কেনা। এ হাটে কাজিপুর ছাড়াও পাশ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল থেকে কৃষক ও ব্যাপারীরা এসে পাট ক্রয় বিক্রয় করছেন।
সরিষাবাড়ি উপজেলার পাটের ব্যাপারী আবুল হাশেম জানান, পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা হয় ও পরিবহন খরচ কম। প্রতিহাটে তিনি ৫০-৭০ মন পাট নৌকা থেকে ক্রয় করে থাকেন। চরগিরিশের সোবহান ব্যাপারি বলেন, অন্য হাট থেকে পাট কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি থাকি। তিনি প্রতিহাটে ৮০-৯০ মন পাট ক্রয় করেন। নাটুয়ারপাড়ার কৃষক আবু সাইদ বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বন্যায় ডুবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবুও বিক্রি করে বেশ দাম পেয়েছি।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরীফুল ইসলাম জানান, এ বছর কাজিপুর উপজেলায় ৪২৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। প্রতি মন পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এবছর হেক্টর প্রতি পাটের গড় উৎপাদন হয়েছে আড়াই টন। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জামালপুর জেলার লোকজন এই হাটে পাট বেচাকেনা করতে আসেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় জেলায় পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। বন্যা হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া (পানিতে ডুবিয়ে )নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। বন্যার পানিতে পাট ধোয়ায় পাটের মানও ভালো হয়েছে। যে কারণে কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছে।