শাসনের মসনদে রক্তাক্ত পদচিহ্ন: সাধারণ মানুষের দাবি কি শুনছে কেউ?
দেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ যে কতটা রক্তমাখা, তা স্পষ্ট। এটি কোনো হাসি-খেলার গল্প নয়, বরং হাজারো মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাস। ছাত্র-জনতার রক্তে সিক্ত এই মসনদ আপনাদের হাতে। তাদের ত্যাগ আপনাদের ক্ষমতার ভিত্তি। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আপনারা কীভাবে আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেবেন?
আমরা সাধারণ মানুষ; আমাদের কথা সরল—আলুর দাম ৩০ টাকা চাই, ৫০ টাকায় চাল চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই। এগুলো কোনো বিলাসী চাওয়া নয়, বরং ন্যায্য দাবি। আমরা এত সুশীল নই যে, সবকিছু মুখ বুজে মেনে নেব। আমরা ঘটে যাওয়া নির্মম গণহত্যার বিচার চাই, বিচার চাই। এই বিচারের দাবি শুধু কান্নার নয়, এটি আমাদের অধিকার, আমাদের রক্তের ঋণ।
কিন্তু যখনই আমরা ন্যায়বিচারের দাবি তুলতে যাই, তখন তা “অপপ্রচার” বা “অস্থিরতা সৃষ্টি” হিসেবে চিত্রিত হয়। এমনকি ন্যায়বিচারের দাবি তুললেও কেমন যেন এক অন্ধকার নীরবতা ঘিরে ধরে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সাধারণ মানুষের কণ্ঠ কখনো চেপে রাখা যায় না।
যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের কাছে আমাদের সরাসরি প্রশ্ন—কীভাবে এই দেশ শাসন করবেন? ছাত্র-জনতা আপনাদের চেয়ারে বসিয়েছে। তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার দায়িত্ব আপনাদেরই। ক্ষমতার আসনে বসার চেয়ে এই ঋণ শোধ করা অনেক কঠিন। আমরা দেখতে চাই, আপনারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন।
আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, কিন্তু অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আপসহীন। সুশীলতার মুখোশ পরে কোনো লাভ নেই। আমরা চেঁচিয়ে বলব—বিচার চাই, ন্যায্য অধিকার চাই। শাসকের দায়িত্ব হলো সেই কণ্ঠস্বর শোনা, তাকে রুদ্ধ করা নয়।
দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বরই শাসনের প্রকৃত শক্তি। সেই কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি যদি শাসনকাজে না আসে, তবে এই শাসন চিরস্থায়ী হবে না।
মো: তানজিম হোসাইন,
শিক্ষক ও সাংবাদিক