গাজা—একটি অবরুদ্ধ ভূমি, যেখানে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বিশ্বের চোখের সামনে এক নীরব গণহত্যা, যেখানে প্রতি ৩০ মিনিট হারায় একটি নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ। আজ সেই গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় শিশুর আর্তনাদ, মাতৃক্রন্দন, এবং এক অসহায় জাতির চিৎকার।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, গাজায় চলমান আগ্রাসনে মৃত শিশুদের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে আরও হাজারো শিশু, যাদের সন্ধান মেলেনি। এই মৃত্যু শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি শিশুর সাথে নিভে যাচ্ছে একটি পরিবার, একটি ভবিষ্যৎ।
৭১০টি এক বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে। সেই নিষ্পাপ শিশুরা, যাদের পৃথিবীর আলো দেখার মাত্র কয়েক মাস পেরিয়েছে, তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে এক অমানবিক যুদ্ধ। ১ থেকে ৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৩। এই ছোট্ট হাতগুলো, যেগুলো মা-বাবার আঙুল ধরে হাঁটতে শিখছিল, আজ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
গাজার প্রতিটি পরিবার আজ মৃত্যু আর ধ্বংসের সাক্ষী। যেসব শিশু বেঁচে আছে, তারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর যুদ্ধের ভীতি তাদের জীবনে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে। গাজার শিশুদের কাছে স্বাভাবিক জীবন এক স্বপ্ন, যা কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না।
গণহত্যার দায় কার?
এই প্রশ্ন আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে বাধ্য করে। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলা দেশগুলো আজ নির্বাক। কীভাবে এমন নৃশংসতা ঘটতে পারে, যেখানে প্রতিটি ৩০ মিনিটে একটি শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে? মানবতার এই চরম বিপর্যয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে—মানবাধিকার কি তবে ক্ষমতাশালীদের হাতিয়ার?
গাজার আর্তনাদের প্রতিধ্বনি
গাজার শিশুদের এই আর্তনাদ শুধু তাদের নয়, এটি পুরো মানবতার একটি কলঙ্ক। আজ আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই, তবে আমাদের ভবিষ্যৎও একদিন এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হতে পারে। গাজার প্রতিটি শিশু, প্রতিটি মা, এবং প্রতিটি পরিবার আমাদের কাছে ন্যায়বিচার চায়, চায় একটি জীবনের অধিকার।
আসুন, আমরা আওয়াজ তুলি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে, হত্যার বিরুদ্ধে, এবং মানবতার পক্ষে।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক