মোঃ কামরুল হাসান কাজল কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা, মাড়াইয়ের ব্যস্ততা। বিস্তৃত ফসলের মাঠজুড়ে চলছে সোনালি ধান কাটার উৎসব। নতুন ধান ঘরে উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী ও দিনমুজুরা। ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কৃষকরা দল বেধে ধান কাটছেন আর মনের সুখে গান গাইছেন। কেউ ধানের আটি বাঁধছেন। কোথাও কৃষক জমিতে বসে কৃষাণীর আনা খাবার খাচ্ছেন। ধান কুরানির দল ব্যস্ত জমিতে পড়ে থাকা ধান কুরাতে। কোথাও ধান কেটে জমা করে রাখা হয়েছে, কোথাও ঘোড়ার গাড়ী, অটো, কোথাও কাধে করে কৃষকরা ধান বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সর্বত্রই নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ কৃষক পরিবারের চোখে-মুখে। ফসলের মাঠ থেকে কৃষকের বাড়ি সর্বত্র চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসব।
কৃষকরা জানান, এখন পুরোদমে রোপা আমন কাটা শুরু হয়েছে। কুয়াশা-শীতকে উপেক্ষা করে কৃষকরা সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করছেন। তারা জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার কাজ শেষ হবে। অগ্রাহায়ন মাসের মধ্যে ধান শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজ সম্পন্ন হবে।
কৃষক ও দিন মুজুরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমির ধান কাটতে তারা ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা চুক্তি নিচ্ছেন। বাড়ি পৌছে দেয়া পর্যন্ত ৩৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। একজন দিন মুজুর তার পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৫০০ টাকা করে।
৫নং ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের আঙ্গারিয়া গ্রামের আঃ মান্নান জানান, পোকার কারনে ধানের শিশ মরে গেছে চিটা বেশি হয়েছে। এবার ফলন বেশি ভালো হয় নাই। এসব জমিতে বিঘায় ১৬ থেকে ১৯ মন ধান পাই। সেখানে ১২ থেকে ১৫ মনের বেশি পাওয়া যাবে না। আমরা নিজের জমিতে কাজ করার কারনে কিছুটা লাভ থাকতে পারে। কামলা দিয়ে কাজ করালে লোকসান হত।
১নং পাথরডুবি ইউনিয়নের দলবাড়ী বিলের কৃষক আঃ সালাম জানান, চার বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ন জাতের ধান লাগিয়েছি। বিঘায় ১০-১২ মন ধান হবে। আমার জমিতে পোকার আক্রমন নাই তবে আড়াই বিঘা জমিতে চিটা হয়েছে বেশি। এবার আবাদে আমার ৮-১০ হাজার টাকা লোকসান হবে।
৩ নং তিলাই ইউনিয়নের কইকুড়ি বিলের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, আমাদের জমিতে মাজরা পোকা আক্রমন করলেও ফসল মোটামুটি ভালো হয়েছে। বিঘায় ১৯-২০ মন ধান ঘরে উঠানো যাবে।
চর ভূরুঙ্গামারী জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানান, আমি তিন বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। ধান ভালো হয় নাই ছত্রাক আর কারেন্ট পোকার আক্রমনে ধান খারাপ হয়েছে। আমার খরচ তোলাই কষ্ট হবে।
আন্ধারীঝার ইউনিয়নের বীর ধাউরারকুটির কৃষক এরশাদ জানান, হামার এটি ধানের বাম্পার ফলন হইছে, বিঘায় ১৯-২০ মন পামো।
পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা চরের কৃষক আশাদুল ও দিলবর জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং পোকামাকরের আক্রমণ কম থাকায় এবার আমনের ফলন হয়েছে।
বঙ্গ সোনাটাহাট ইউনিয়নের কৃষক মতি জানান, কিছু জমিতে ধান একটু খারাপ হলেও বেশির ভাগ জমিতে ধান ভালো হয়েছে।
বলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কেদার খাপারা গ্রামের কৃষক মাহবুব ও রিয়াজুল জানান, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ১৯-২০ মনের কম হবে না।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ভূরুঙ্গামারীর জয়মনির হাট এলএসডিতে চলতি ২০২৪-২৫ আমন মৌসুমে ৩৩টাকা কেজি দরে প্রতি মন ১৩২০ টাকা করে ১১শ ১১মেঃটঃ ধান সংগ্রহ করা হবে। ধান বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অত্র এলাকার কৃষকদের অনলাইনে রেজিষ্টেশন করতে হবে। যে কৃষক আগে রেজিষ্টেশন করবেন তাকে আগে অনুমোদন দেয়া হবে। অনুমোদন পরবর্তী ১৫ দিনের মধে কৃষককে জয় মনিরহাট এলএসডিতে ধান বিক্রয় করতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, এ বছর উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর। যেটা আমাদের অর্জিত হয়েছে। রোগ, পোকা-মাকর তেমন ছিলো না। মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষনিক কৃষকদের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষি উপকরণ গুলো সঠিক সময়ে ডেলিভারি দেয়ার কারনে আমনের যে লক্ষমাত্রা সেটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।