ঝালকাঠি প্রতিনিধি :
আজ সোমবার সকালে ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার এক কমিউনিটি সেন্টারে ঝালকাঠি জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, “এ দেশ কারও একার নয়, দেশ সবার। এ দেশের মানুষ গত ১৫ বছরে অনেক জুলুম–নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই, আর বিভক্ত দেখতে চাই না। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”
সমাবেশে শফিকুর রহমান বলেন,
জামায়াতের আমির বলেন, ‘একটি উগ্র গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবীকে হত্যা করেছে। তারা চেয়েছিল, বাংলাদেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে। কিন্তু এ দেশের দায়িত্বশীল মুসলমানরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, দেশের মানুষকে শান্ত করেছি। এ দেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিতে বসবাস করবে। কোনও ধর্মীয় উপাসনালয় কাউকে পাহারা দিতে হবে না। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে অফিস আদালতে কোথাও গিয়ে আপনি লাঞ্ছিত হবেন না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন শ্রমিক পাবেন, তার ঘামের মজুরি। জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে কাউকে অধিকার ভিক্ষা করতে হবে না। সবাইকে তার অধিকার সম্মানের সঙ্গে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করেছে। কিন্তু তাদের সেই অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শান্তিকামী ছাত্র-জনতা দিয়েছে। আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসরেরা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র হোক, তা ব্যর্থ করতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির আরও বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমে বলেছিল, “উই ওয়ান্ট জাস্টিজ”, “বৈষম্য চাই না, সুবিচার চাই”, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই”, “দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই”। আমরাও এমন একটা বাংলাদেশ চাচ্ছি। সম্মানের বাংলাদেশ গড়তে চাই। সামাজিক নিরাপত্তা গড়তে চাই। সবাই মিলে প্রিয় বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।
আবু সাঈদ আমাদের এই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান আইকন ও সেনাপতি। তিনি অধিকার চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তাকে স্যালুট জানাই। আমরা সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছি। এই বাংলাদেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। কোন ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আগামীতে কোনও ধর্মীয় উপসনালয় পাহারা দিতে হবেনা। সবাই নিরাপদ থাকবেন। বিচারকের আসনে বসে মানুষকে জুলুম করা যাবে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশে খুন, ক্রসফায়ার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ভরে গিয়েছিল। বহু মায়ের বুক খালি করা হয়েছে। বাবার সামনে থেকে তাঁর সন্তানকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে বিচারক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত যাদের অন্যায়ভাবে খুন করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের সবাইকে শহীদের স্বীকৃতি দিন এবং তাদের ওপর সন্তুষ্ট হোন।’
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে বলতেছি, এখনও যারা কারাগারে বন্দি আছে তাদের মুক্ত করতে হবে। অতীতের স্বৈরশাসক জাতিকে ভাগ করে টুকরো টুকরো করে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই, হিংসা বিদ্বেষের অবসান হোক। সবগুলো হাত এক মোহনায় একত্রিত হোক। সবাই মিলে একটা মহাসমুদ্রে একত্রিত হোক।’
সমতার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে থাকবে মানবিকতা, মূল্যায়ন, গ্রহণযোগ্যতা ও অধিকার। কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করবে। তাহলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের রক্তের সঠিক মূল্যায়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডা. শফিকুর রহমান।
ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য এডভোকেট হাফিজুর রহমান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী।। সমাবেশে বরিশাল বিভাগের জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সামীর আল মাহমুদ
ঝালকাঠি।