ফাতেমা আক্তার মাহমুদা ইভা স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা ঃঃ
মানিকগঞ্জ জেলার শীর্ষ শিক্ষাঙ্গনে ফ্যাসিস্ট তোষণবাদী ও সুবিধাভোগীদের জয়জয়কার। জুলাই বিপ্লবকে থোড়াই কেয়ার করে মানিকগঞ্জ জেলার শিক্ষাপ্রসাসনে ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগী এবং ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের আধিক্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী আমলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী নেতা কর্মীদের নিয়ে চলা এবং ব্যাক্তিদের কেউ কেউ আবার সুযোগ বুঝে পোষাক বদলে বিএনপি পন্থী বলে নিজেদের প্রচার করার চেষ্টা করছে। এই নিয়ে জেলার জনমনে এবং বুদ্ধীজিবি মহলে অসন্তোষ বিরাজ করছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। মানিকগঞ্জের চারটি পুরোন সরকারী কলেজের মধ্যে দুটিতেই অধ্যক্ষ হিসেবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের চরম সুবিধাবাদী এবং আওয়ামী লীগের দলকানা কর্মচারী বলে কুখ্যাত দুই ব্যাক্তিকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঘিওর কলেজে আওয়ামী লীগের নৈশভোটের এমপি ও পলাতক নাইমুর রহমানের নিকটাত্নীয় আনিসুর রহমান এবং সরকারি ভিকু মেমোরিয়াল কলেজে আরেক কুখ্যাত শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক মোল্লা কে নিয়োগের ঘটনায় মানিকগঞ্জের সাধারণ জনগণ নিজেদের প্রতারিত বলে মনে করছেন।
সম্প্রতি ঘিওর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে প্রফেসর আনিসুর রহমানকে যিনি আগে একই কলেজের উপাধ্যাক্ষ্য হিসেবে ঘিওরে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগেরই সাবেক সাংসদ নাইমুর রহমানকে নিজের নিকটাত্নীয় বলে পরিচয় দিয়ে এবং তৎকালীন সাংসদের প্রভাব প্রয়োগ করে তিনি উপাধ্যাক্ষ্য পদ দখল করেছিলেন। সেই সাথে এই সাংসদের ক্ষমতা বলয় ব্যবহার করে মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে জমজমাট গাড়ীর ব্যাবসা দাড় করিয়েছিলেন। বিভিন্ন অছিলায় দীর্ঘসময়ে কলেজে অনুপস্থিত থেকে শুধুমাত্র দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শুধ বেতন গ্রহণের জন্য কলেজে প্রবেশ করতেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও সরকারী আইন লঙ্ঘন করে ঘিওরের রাজনীতিতে মামাতো ভাই আওয়ামী লীগের নৈশভোটের সাংসদ নাইমুর রহমানের লুটপাটের বলয়ের অংশ হিসেবে নিজেকে প্রচার করেছেন সবসময়। বিভিন্ন সময় নারী সহকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার মতো ঘটনাও তিনি ক্রমাগত ঘটিয়ে চলেছেন। গণবিপ্লবের পর গত আগস্ট থেকে একটু নিশ্চুপ থাকলেও অক্টোবরে তৎকালীন অধ্যক্ষের অবসরের পর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর একটু একটু করে খোলস বদলাতে থাকেন। সম্প্রতি কলেজে ছাত্র-ছাত্রী বিষয়ে নোংরা কথা বলার প্রেক্ষিতে যখন শিক্ষার্থীরা তার কথার ব্যাখ্যা জানতে আসেন, তখন তিনি নিজেকে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতাকে আত্নীয় হিসেবে পরিচয় দেন। বিগত সময়ে নাইমুর রহমানের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের অপদস্থ করা এই আনিসুর যথন আবার বিএনপি সংশ্লিষ্টতায় নিজের পরিচয় দেয়, তখন শিক্ষার্থীরা এই পল্টিবাজ শিক্ষকনামধারী সুবিধাবাদী এই ব্যাক্তিকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার কক্ষ ভাঙচুর করে এবং তাকে দ্রুত কলেজ থেকে বদলী হয়ে চলে যাওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে পূর্ণ দায়িত্ব দেয়ায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অধিবাসীরা হতবাক হয়ে যায়। ২৪ এর রক্ত দেয়া বিপ্লবের চেতনায় কীভাবে ফ্যাসিবাদী দোসর পুর্ণ দায়িত্ব পেয়ে গেলো সেই প্রশ্ন মানিকগঞ্জবাসীর মুখেমুখে।
আরেকদিকে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সরকারী ভিকু মেমোরিয়াল কলেজে কুখ্যাত আরেক দলকানা আবু বকর সিদ্দিক মোল্লাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ আরও বড় চমক হিসেবে দেখা গেছে। বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে থেকে এরকম একটি পদায়ন রীতিমতো 24 এর বিপ্লবের শহীদের রক্তের সাথে সরাসরি বেইমানী বলে অভিহিত করেছেন জেলার শিক্ষাঙ্গনের সাথে জড়িত সবাই। মোল্লা নামে পরিচিত এই কুখ্যাত শিক্ষক, জেলার আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের সাথে হরদম চলাফেরা করতেন। সরকারী কর্মকর্তার আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কলেজ ও কলেজের বাইরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোপাগান্ডায় মশগুল থাকতেন। সরকারী কর্মকর্তার আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জেলার বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে ফ্যাসিস্ট লীগের সন্ত্রাসীদের সাথে ঘনিষ্টতা বজায় রাখতেন এবং সগর্বে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ব-গর্বে প্রচার করতেন। নৈশ ভোট, ডামি ভোট সহ স্থানীয় নির্বাচনগুলেতে তিনি সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন এবং বিভিন্ন প্রিজাইডিং অফিসারদের ফোন করে ও দেখা করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য নির্দেশ ও নির্দেশ না মানেলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি প্রদান করেছেন।
ভিকু মেমোরিয়াল কলেজের আগে তিনি মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে পদায়িত অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রভাববলয়ের মাধ্যমে ওই কলেজে সবসময় ভীতকর পরিবেশ তৈরি করেছেন। স্থানীয় রাজনীতিকে কলেজে টেনে নিয়ে জোর করে বিনাভোটে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক পদ দখল করে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। কলেজের নিয়মিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যাক্ষের অনুপস্থিতিতে প্রায় তিন মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্যের ভূমিকা পালনকালে ২০২২ সালে কলেজের সমস্ত ফান্ড একপ্রকার লুট করে মানিকগঞ্জ শহরে তার বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেন। তাঁর ও তার অনুসারী দু/একজন শিক্ষক মহিলা সহকর্মীদের প্রতি বিভিন্ন অশালীন কথা ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে বিব্রত করেছিলেন যার প্রেক্ষিতে অনেক মহিলা শিক্ষক কলেজ থেকে বদলী নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিগত সময়ে অধ্যক্ষ না থেকেও অধ্যক্ষ পরিচয়ে বক্তব্য দিতেন। এবং সকল প্রকার সরকারী কর্মচারীর আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে সরকারি অনুষ্ঠাণগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক রাষ্ট্রপতিকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। স্বাধীনতার ঘোষককে বিদ্রুপ করে সরকারি অনুষ্ঠানের মাইকে তিনি কুরুচিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেছিলেন এই বলে যে –“ পাঠক কি কখনও ঘোষক হতে পারে??”। এছাড়াও তিনি জিয়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে অসংখ্য কুরুচিপপূর্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী ও জিয়া পরিবারের সদস্য কে তিনি সরাসরি একুশে আগস্টের ঘটনার জন্য দায়ী করেছিলেন এবং জিয়া পরিবারের আরেক সম্মানিত সদস্য ও লন্ডনে থেকে বিপ্লবকে নেতৃত্ব দেয়া অবিসংবিত নেতাকে আপত্তিকর শব্দযোগে অভিহিত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলেন। জুলাই বিপ্লবের সময় তিনি তার আওয়ামীতোষণ বজায় রেখে সরাসরি বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং তৎকালীন স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে একযোগে বিপ্লববিরোধী প্রচারণায় অংশ নেন। শহীদ ইয়ামিন, মুগ্ধদের মৃত্যু তাকে আলোড়িত না করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ আলোজিত ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ মিয়ার গায়েবী জানাজায় অত্যুৎসাহে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে। ফলে বিপ্লবপরবর্তী কলেজের প্রথম সভায় সহকর্মীদের তোপের মুখে তিনি পড়েন এবং সহকর্মীরা তাকে দ্রুত বদলী নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এর পর শিক্ষক মোল্লা তদবির করে সাটুরিয়ায় ভিকু মেমোরিয়াল কলেজে বদলী হন। নতুন এলাকার কলেজে গিয়ে তিনি এবার একটু একটু করে খোলস বদলাতে থাকেন এবং নিজেকে বিভিন্নরূপে বিএনপি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেন এবং সাটুরিয়া থানার বি্এনপির কতিপয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করেন এবং সকল সরকারি আচরণবিধি ভঙ্গ করে এই কলেজের সহকর্মীদেরও বিভিন্নভাবে অপদস্থ করছেন। এই ব্যাক্তি শিক্ষা রাজনীতিতে শিক্ষা ক্যাডারের সবচাইতে দলকানা প্যানেল- “বঙ্গবন্ধু…….. আদর্শ উজ্জীবিত” প্যানেলের আরেক বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব জনাব শাহেদুল কবিরের সাথে থেকে বরাবরই নির্বাচন করেছিলেন যুগ্ন সম্পাদক, ঢাকা বিভাগ পদে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার, উক্ত প্যানেলের সবাই তাদের কৃতকর্মের জন্য কোণঠাাসা অবস্থায় থাকলেও মানিকগঞ্জের এই দলকানা ও ফ্যাসিবাদী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দীকী মোল্লা কোন জাদুবলে প্রাইজ পোস্টিং পেলো সেটা পুরো শিক্ষা ক্যাডারেরেই বিস্ময়।
বিপ্লব পরবর্বতী সরকারের অধীনে কোন ফাঁক গলে এই বিতর্কিত চরিত্রগুলো কেন শিক্ষা প্রশাসনে ঢুকছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখার বিষয়। কেননা রং পাল্টিয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঢুকে এরাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুযোগ বুঝে প্রতিবিপ্লবের হুমকী প্রদান করতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।