মিজানুর রহমান,জেলা প্রতিনিধি (বগুড়া):-
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় শীতের আগমনী বার্তা ঋতু বৈচিত্র্যে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ততা শুরু হয়েছে গাছিদের। প্রতিদিন ভোরে বেরিয়ে পড়ছেন তারা রস সংগ্রহে।কার আগে কে কত বেশি পরিমাণ রস সংগ্রহ করবেন, এই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন তারা। কারণ শীতের সকালে খেজুর গুড় দিয়ে পিঠা পায়েসের মজাই আলাদা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছিরা খেজুর গাছ বিশেষভাবে কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।এছাড়া আগের মতো খেজুর গাছও নেই। প্রতিদিন ইটভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শতশত খেজুর গাছ। ফলে এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের চন্দ্রাহাটা গ্রামের গাছি হানিফ বলেন, “শীতকাল শুরু হলেই গাছ পরিষ্কার করে রস বের করার কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন বিকেলে মাটির হাঁড়ি,অথবা বিভিন্ন রকম রস সংগ্রহের পাত্র লাগাই, আর সকালে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করি”
খেজুরগাছ পরিচর্যার গুরুত্ব তুলে ধরে গাছি রিপন বলেন, “রসের মান ঠিক রাখতে হলে গাছ ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হয়। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য।”
গাছিরা বলেন,শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে কয়েকমাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। এ থেকে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।তবে গাছ সংকটের কারণে চলতি বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন অনেক গাছি।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর শীতকালে গ্রামীণ জনপদে রস উৎসব হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে রস পান করেন, আর রস দিয়ে পিঠা-পুলি তৈরি করে জামাই আপ্যায়ন করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হান্নান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা।
আমরা কৃষকদের বাড়ির আশপাশ, জমির আইল, পুকুরপাড় এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হবেন।