এম.জে.এইচ নোমান
ঢাকা প্রতিনিধি
জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রেখে জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক জোটের আয়োজনে অদ্য (৪ ডিসেম্বর ২০২৪-বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন চত্বরে দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ শীর্ষক সভার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য মহোদয় বলেন, “স্বৈরাচারের পতন পরবর্তীতে আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা হচ্ছে, ছাত্রনেতৃবৃন্দ দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কালে আমরা ক্রিমিনাল ইকোনোমির বয়ান শুনতাম, যা আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ছাত্রসমাজের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ আমাদেরকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।”
কলা অনুষদের সাবেক ডিন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জবি সকল ধরনের আন্দোলনের রসদ যোগায় কিন্তু জবি’র ত্যাগ কেউ স্মরণ করে না। কাঙ্খিত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য কোনো ধরনের বৈষম্য করবো না।”
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইন বলেন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্যে, ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে এবং মাতৃভূমিতে সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য থাকতে হবে।”
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিপীড়ন, গুম ও খুনের প্রেক্ষাপট ছিল উল্লেখযোগ্য। সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে জবিসহ অন্যান্য জায়গায় ঘটে যাওয়া এ ধরনের গুম ও খুনের বিচার করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আবাসনসহ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় গত পনের বছরে এর তেমন কোন উন্নতি হয়নি।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ট্রেন্ড থেকে বের হতে না পারলে সাধারন শিক্ষার্থীরা কখনও কোন ছাত্র সংগঠনকে গ্রহণ করবে না। শিক্ষার ও শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনগুলো এগিয়ে যাবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বর্তমানের কাঠগড়ায় অতীতের হাসিনাকে যেভাবে দায় দিচ্ছি, আজকের মঞ্চটিও ঠিক সেরকম গুরুত্বপূর্ণ। এই মঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা যদি দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে না পারি তাহলে আমাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “জাতীয় ঐক্য ও বিপ্লবের জন্য শিক্ষার্থীদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, “দাসত্বের জন্য কোনো বিপ্লব হয় নাই, ফ্যাসিবাদি চক্রান্ত এখনও চলমান। সকল বিভাজন ভুলে আমাদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে।”
এছাড়াও বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য বিষয়ে আরো বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় ছাত্র সমাজের আহবায়ক সাইফুল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জবি শাখার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ও সেক্রেটারি সুজন মোল্লা, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির জবি শাখার সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার ও সেক্রেটারি আসাদুল ইসলাম, জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের এ কে এম রাব্বি, জাস্টিস ফর জুলাই’র মুখপাত্র মাহি আল মোবাশের ও জবি’র আহবায়ক সজিবুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জবির আহবায়ক ইভান তাহসিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নূর নবী, বাংলাদেশ ইসলামিক ছাত্র আন্দোলন জবির সেক্রেটারি আশিকুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর এবং যৌথভাবে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফ ও জবি সাংবাদিক সমিতির সেক্রেটারি মামুন শেখ। উল্লেখ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোটের মধ্যে রয়েছে- জবি সাংবাদিক সমিতি, জবি প্রেসক্লাব ও জবি রিপোর্টার্স ইউনিটি।