কামরুল ইসলাম
নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আগামী ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে টোল প্রদান করে গাড়ি চলাচল করতে হবে। তবে মোটরসাইকেল এবং কন্টেনার ট্রেইলর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে পারবে না। গত কয়েক মাস পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের সময় মোটরসাইকেল চলাচল করলেও ১৯ ডিসেম্বর থেকে তা কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে স্থাপিত টোল প্লাজায় টোল আদায় করা হবে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার এবং নামার টোল পতেঙ্গাতেই পরিশোধ করতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গতকাল রোববার বৈঠক করে টোল আদায়ের দিন ঠিক করেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হারেই টোল আদায় করা হবে।
জানা যায়, নগরে যান চলাচলে গতি আনতে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার–পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বেশ আগে। লালখান বাজার থেকে ওঠার র্যাম্পের কাজ শেষ। জিইসি মোড় থেকে ওঠার র্যাম্পের কাজ চলছে। শেষ হয়েছে টাইগারপাসে নামার র্যাম্পও। এক্সপ্রেসওয়েতে গত আগস্ট মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল করছে।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিডিএ টোল আদায়ের মাধ্যমে যান চলাচল শুরু করার কথা বললেও পরীক্ষামূলক যান চলাচলে টোল ফ্রি ছিল। সিডিএ ইতোপূর্বে একটি টোল হার নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সিডিএতে নতুন চেয়ারম্যান পদায়ন করা হয়। নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন বোর্ডও। নতুন চেয়ারম্যান এক্সপ্রেসওয়ের টোল কমানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে সিডিএ নতুন করে টোল হার নির্ধারণ করে গত ৩ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ২৭ নভেম্বর মন্ত্রণালয় সিডিএর প্রস্তাবিত টোল হার অনুমোদন দিয়েছে। এতে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল এবং কন্টেনার মুভার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সিএনজি টেক্সি চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থেকে টোল আদায় শুরু করছে সিডিএ।
সূত্রে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে নতুন টোল হার অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। এতে জিইসি, সিআরবি, আগ্রাবাদ থেকে ফ্লাইওভারে উঠে সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, সমুদ্র সৈকতে নামা সিএনজি টেক্সির জন্য ৩০ টাকা, কারের জন্য ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্র সৈকত, কেইপিজেড, সিইপিজেড থেকে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস এবং লালখান বাজারে নামার জন্য সিএনজি টেক্সির জন্য ৩০ টাকা, কারের জন্য ৮০ টাকা, জিপ এবং মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জিইসি ও টাইগারপাস থেকে উঠে আগ্রাবাদ, ফকিরহাটে নামা, আবার নিমতলা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে উঠে লালখান বাজার ও টাইগারপাসে নামার গাড়িসমূহের জন্য সিএনজি টেক্সিতে ২০ টাকা, কারের জন্য ৫০ টাকা, জিপ ৭০ টাকা, মাইক্রোবাস ৯০ টাকা, পিকআপ ১৩০ টাকা, মিনিবাস ১৮০ টাকা, বাস ২৫০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশে ট্রাক (ছয় চাকা) এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত টোল প্রস্তাবে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলরের নামোল্লেখ করে চলাচল নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত টোলে বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠানামার হার নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও এখন কেবলমাত্র মুরাদপুর ও বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে উঠে লালখান বাজারে নামা যাবে। পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে ওঠার সময় লালখান বাজার পর্যন্ত টোল আদায় করা হবে। তবে কেউ চাইলে এক্সপ্রেসওয়ে ধরে আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার হয়ে মুরাদপুর বা ষোলশহরের বায়েজিদ রোডে গিয়ে নামতে পারবেন। অপরদিকে শহরের দুটি পয়েন্টের যেখান থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠুক না কেন, পতেঙ্গা প্রান্তে নামার সময় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার নির্ধারিত টোল পরিশোধ করতে হবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে টোল আদায়ের ব্যাপারটি অনুমোদিত হয়েছে। সিডিএ চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আজ (গতকাল) বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে সব ধরনের যানবাহনের জন্য টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায়ের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।