মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
আটক ছিনতাইকারী মেহেদী হাসান মুন্না জানিয়েছে, অন্য ছিনতাইকারীরা হলেন পৌর ৯নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান রফিক। তার সহযোগী থানাঘাটা এলাকার আরাফাত হোসেন, আবাদেরহাট এলাকার খোকন আলীর ছেলে নয়ন হোসেন এবং নলকুর এলাকার এজাজুল হক। ছিনতাইকারীরা সবাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুজ্জামান রফিকের কর্মী।
সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন একজন।
আটক ছিনতাইকারীর নাম মেহেদী হাসান মুন্না (২৪)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুচপুকুর এলাকার আতিয়ার রহমানের ছেলে। ভুক্তভোগীরা হলেন ভোমরার মেসার্স মা ট্রেডার্সের কর্মচারী ওবায়দুল্লাহ সরদার ও শওকত হোসেন। এর মধ্যে ওবায়দুল্লাহ গুরুতর আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের আলিপুর ঢালীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ছিনতাইকারীদের ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। ফুটেজে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীদের মাস্টারমাইন্ড সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান রফিক ছিনতাই করা টাকার ব্যাগ নিয়ে নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, ব্যাংক থেকে মোটরসাইকেলে করে ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫শত টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ীর দুই কর্মচারী। পরে দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচজনের একটি দল পিছু নেয় তাদের। সুযোগ বুঝে তাদের ওপর আক্রমণ করে ছিনিয়ে নেয় টাকার ব্যাগ। এ সময় মুন্নাকে আটক করে স্থানীয়রা।
ওবায়দুল্লাহ সরদার বলেন, আমি ও শওকত আলী বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের ইসলামী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক থেকে ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫শত টাকা তুলে মোটরসাইকেলে ভোমরায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছিলাম। শওকত আলী মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল আর আমি টাকার ব্যাগ নিয়ে তার পেছনে বসে ছিলাম। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে পাঁচ ছিনতাইকারী সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে আমাদের ফলো করে।
একপর্যায়ে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাধীন সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের আলিপুর ঢালীপাড় এলাকায় পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা হাতুড়ি দিয়ে মোটরসাইকেলে আঘাত করলে শওকত মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। তখন আমি টাকার ব্যাগ নিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে তারা কয়েকজন মিলে আমাকে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করে কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
শওকত হোসেন বলেন, ছিনতাইকারীরা যখন টাকার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিল, তখন আমরা দুজন তাদের পিছে দৌড়াতে শুরু করি। এ কারণে একজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে উঠতে না পারায় আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হই। কিন্তু বাকি ৪ ছিনতাইকারী টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভোমরার মেসার্স মা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী মোঃ আমির হামজা বলেন, ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীদের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীরা যদি ব্যবসার টাকা নিয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে চলাফেরা করতে না পারি, তাহলে এই বন্দর দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করব। আজ আমার টাকা ছিনতাই হয়েছে, কাল অন্য ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনতাই হবে।
তিনি বলেন, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক মুন্নার দেওয়া তথ্যে মোট পাঁচ ছিনতাইকারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ছিনতাই করা টাকার ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুজ্জামান রফিক। আমি এ ঘটনায় আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রফিকুজ্জামান রফিক পলাতক থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর থানার ওসি শামিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মুন্না নামের এক ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া মোট চারজনের নামে মামলা হয়েছে। আটক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এর বাইরে কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক করা হবে।