স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আগের মতো চুরি-চামারি করা ও ঘুষ বাণিজ্য হবে না উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমার হাতে যদি কেউ ধরা পড়ে, ১০০ টাকাও যদি ঘুষ খেয়েছেন কোন কর্মকর্তা তাহলে আমি চেষ্টা করবো চাকরি যেন না থাকে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, চোর ধরা পড়লে তার কোন রক্ষা নাই।
আমি যতদিন আছি আপনারা আমার উপর এ বিশ্বাস রাখতে পারেন।
২২ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
নৌ উপদেষ্টা বলেন, বিএসসির জাহাজের বহর আরও বড় করার জন্য চেষ্টা করছি। বিএসসির নিজস্ব টাকায় অন দ্যা স্পট দুটি জাহাজ কিনতে যাচ্ছি, যেগুলো হবে বাল্ক ক্যারিয়ার।
বিএসসির এমডি প্রতিদিন আমাকে খবর দিচ্ছেন, কোথায় কোথায় জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা পাঁচ বছরের নিচে কোনো জাহাজ কিনবো না।
ইতিমধ্যে দুইটি জাপানি জাহাজের খবর পাওয়া গেছে, নিশ্চয় ভালো হবে। জাহাজ দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব হবে, কি হবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো জাহাজ কিনবো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান পৌনে পাঁচশ’ কোটি টাকা ঋণ ফেরত দিয়েছে এরকম দৃষ্টান্ত আর নেই, বিএসসি তা করে দেখিয়েছে এটি বড় কথা। এটা সম্ভব হয়েছে আপনাদের (শেয়ারহোল্ডার) জন্য। বিএসসি শেয়ারবাজারের দুর্দিনে ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। বাজার থেকে চুরি চামারি হয়েছে। কোনো কোম্পানি এত লভ্যাংশ দিতে পারছে না। পাঁচটি জাহাজ বিএসসির বহরে বর্তমানে আছে। আশাকরি, আগামী বছর আপনাদের লভ্যাংশ আরও বাড়বে।
নৌ উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বলেছি, শিপিং লাইনে আসতে চাইলে সহযোগিতা পাবেন। চট্টগ্রাম বন্দর অত্যন্ত মুনাফার জায়গায় আছে। তিন মাসের মধ্যে বন্দরে দুইবার এসেছি। বন্দরের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রামে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ব্যবস্থা করছি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ বন্দর ও বে টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে বসে আছে। এটি হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকদের অধিকতর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রামবাসীর কাছে গর্বের বিষয় হবে। আমরা চেষ্টা করবো বিএসসির মাধ্যমে আমাদের পুরুষ ও নারী ক্যাডেট ও নাবিকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে। এর জন্য জাহাজ দরকার। আমি আশাকরি আগামী এজিএমে সুখবর পাবেন। একজনতো এখানে বলেছেন, ‘অনেকে রাতে এজিএম করে, শেয়ার হোল্ডাররা জানে না। ’ কিন্তু আমরা দিনের বেলায় আপনাদের ডেকে এজিএম করছি। তাও একটি সরকারি সংস্থার এজিএম।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ এসময় বলেন, আমরা মনে করি বিএসসি উদাহরণ সৃষ্টিকারী একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আগামী এক বছরের মধ্যে বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে দুইটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে চারটি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি জানুয়ারিতে হবে। তিন বছরের মধ্যে এ চারটি জাহাজ বহরে যুক্ত হবে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বিএসসি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। এ সংস্থাকে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই আমরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিএসসি ৫৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয় করেছে, ৩১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। সরকারি ঋণের ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি।
আয়োজনে কিছুটা ত্রুটি ছিল, যা শেয়ারহোল্ডার সহ সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ করা যায়। সকালে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান অতিথি নৌ উপদেষ্টা আসতে বিলম্ব হওয়ায় এ নানা জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে দাবি করেন বিএসসি কর্তৃপক্ষ। দুপুরের খাবারের প্যাকেট বিতরণ, শেষে উপহারের প্যাকেট বিতরণে দেখা যায় নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে এরকম বিশৃঙ্খলা শোভনীয় নয় বলে অনেক শেয়ারহোল্ডার এ প্রতিবেদকের কাছে জানান। বিএসসির কমোডর মাহমুদুল মালেক জানান, ১২০০ জনের খাবারের প্যাকেট আয়োজন ছিল, কিন্তু কি কারণে কারণে খাবার সংকট হলো তা অনুসন্ধান করে উদঘাটন করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি ব্যবস্হা নেওয়া হবে। এ বিষয় নিয়ে নৌ সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, নৌ উপদেষ্টা আসতে বিলম্ব হওয়ায় একটু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। খাবারের সংকট ও শেষে উপহার প্যাকেট বিতরণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।