জয় ই মামুন সিনিয়র প্রতিবেদকঃ
প্রতারণার ফাঁদকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে কারিগর এবং প্রতারণা যদি একটি শিল্প হয় তবে সেই শিল্পের শিল্পাচার্য ডাক্তার লায়ন(আদৌ সে লায়ন কিনা সত্যতা পাওয়া যায় নি) হারুন অর রশিদ, চেয়ারম্যান হিডস গ্রুপ।
তার জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার নালী ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামে। বিভিন্ন সময় মানুষের কাছ থেকে ছলেবলে কৌশলে টাকা নিয়ে, সেই টাকা ফেরত না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা চলমান এবং কয়েকটি মামলার সাজার ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামী এই হারুন।
এই ব্যক্তি নামসর্বস্ব ৬৮ টি কোম্পানির চেয়ারম্যান; যা সালমান এফ রহমান এর চাইতেও সংখ্যায় বেশি। ঢাকায় তার দুই স্ত্রী রয়েছেন একজন বড় স্ত্রী জাহানারা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা যাকে ঢাকা উত্তরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের লেডি সাপ্লাইয়ার হিসাবে কুপরিচিত এবং তার কন্যা মানিকগঞ্জ সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ুয়া হাফসা বিনতে হারুন ওরফে ইতু। সমগ্র পরিবারই যেন প্রতারণার ফাঁদ।
ডাক্তার হারুন পেশায় হোমিও চিকিৎসক হলেও নিজেকে ডক্টর অর্থাৎ পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং নিজেকে লায়ন্স ক্লাবের মেম্বার হিসেবে দাবি করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার বরাতে জানা যায় এবং তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সেইন্ট হোম ইউনিভার্সিটি (অস্তিত্বহীন) এবং গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, বরিশালের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
প্রিন্ট এবং মিডিয়া পাড়াতেও তার বিস্তর পদচারণা-সাপ্তাহিক সচিত্র সুতরাং, দৈনিক আপন আলো, মাসিক মানবাধিকার কন্ঠ, ম্যাজিক টিভি, ট্রেন্ডিং ওয়ান লিমিটেড ও বঙ্গ টিভির মালিক তিনি। মানবাধিকার সংগঠন হিডস লিগাল এইড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বৈদেশিক বিনিয়োগ এনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুইফট ফী এর কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারিগর এই প্রতারক হারুন।
নিম্মে ডাক্তার হারুনের আমলনামা তুলে ধরা হলো
ঢাকার নিউমার্কেটে এলাকাস্থিত বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান খানের কাছ থেকে দোকান রেজিস্ট্রির কথা বলে ১১ লাখ টাকা, ধানমন্ডির সাবেক কমিশনার আমজাদ হোসেন ওরফে মিয়া ভাইয়ের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি/ছাড়পত্র নিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৪২ লাখ টাকা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব:) সেলিমের কাছ থেকে ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে ৯৫ লাখ টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা গোলাম হোসেন চৌধুরী (রতন) এর কাছ থেকে ডেভেলপার ব্যবসায় বিনিয়োগের কথা বলে ৪৫ লাখ টাকা, তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী সাধনা দাশগুপ্তের কাছ থেকে আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত নারী সাংসদ হিসাবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা, রাজশাহীর বিএনপি নেতা ও ড্রেজিং ব্যবসায়ী রুনুর কাছ থেকে ড্রেজার আমদানির কথা বলে ১৬ কোটি টাকা, ফেনীর এক বিধবা মহিলা ও তার কানাডা প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে কানাডায় বাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে ৩০ লাখ টাকা, কেরানীগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী আরমান হোসেনকে সন্তান হবার প্রলোভন, ব্যবসায় বৈদেশিক বিনিয়োগ এনে দেওয়া এবং তার ছোট ভাইকে জাপান পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে এবং মুরিদ বানিয়ে বিভিন্ন সময়ে আত্মসাৎ করেন ৪১ লক্ষ টাকা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী(এফসিএ)-র পিএস নুরুদ্দিনের কাছ থেকে ফিলিং স্টেশন ক্রয়ের কথা বলে ২ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রামের আরেক ব্যবসায়ী তারিফ হোসেন কে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে মোট ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এই প্রতারক হারুন। দেশ ও বিদেশে এমন কোন প্রতারণা ফাঁদ নাই যে তার বিরুদ্ধে এসব আমলনামার অভিযোগ দৈনিক দিগন্তর পত্রিকার কাছে নাই।
অসহায় দুস্থ মানুষকেও ছাড় দেয়নি এই ভন্ড পীর প্রতারক হারুন। ঢাকার জুরাইনে তার মুরিদ সিএনজি অটোরিকশা চালক আলমগীর হোসেনের ছেলেকে আমেরিকা পাঠানোর কথা বলে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, মুরিদ মুন্নি ও তার ছোট ভাই কারখানা শ্রমিক জুয়েলের কাছ থেকে আনুমানিক ৭লাখ টাকা ও স্বর্ণের চেন, মুরিদ মনিরকে ব্রেনস্ট্রোক থেকে সুস্থ করার কথা বলে ১.৫ লাখ টাকা, মুরিদ যুবদল নেতা সম্রাট হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে ১লাখ টাকা, মুরিদ গাড়িচালক আলআমীন হোসেনকে শ্রমিক নেতা বানানোর আশ্বাসে ১লাখ টাকা, মুরিদ মো: হানিফ মিয়া কে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকা, মুরিদ স্টিল ব্যবসায়ী ইবরাহীম মিয়ার কাছ থেকে শিট আমদানি করে দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ টাকা এবং স্বামীর সাথে মিলিয়ে দাম্পত্য কলহ দূর করে সংসারে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে কুমকুম মীর্জার কাছ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে এই ভন্ড প্রতারক হারুন।
আইনের রক্ষক পুলিশ এবং আইনজীবীও রক্ষা পায়নি এই দুর্ধর্ষ দুশ্চরিত্র প্রতারক হারুনের প্রতারণার কবল থেকে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ দিদারের কাছ থেকে আনুমানিক ১ লাখ টাকা এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিউল আলমের বরাতে জানা যায় কয়েকজন পুলিশের কাছ থেকে বদলী করার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক হারুন। এছাড়াও পল্টন থানায় চলমান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালাহউদ্দীন এর বরাতে জানা যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাগজ ও অন্যান্য নথি জালিয়াতি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় এই ওয়ারেন্ট ভুক্ত এই অপরাধী। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম সীমান্ত পিলার, প্রাগৈতিহাসিক কয়েন পাচারের অভিযোগও আছে। তার প্রতারণার সহযোগী নাহার প্লাজা ও স্কাইভিউ হোটেলের মালিক ও ঋণ খেলাপি শফিউল আলম সানা, হ্যাকার শাহজাহান বাদশাহ, স্ত্রী আসমা, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির রিপন, সাংবাদিক নামধারী গনআজাদী লীগের সভাপতি ও ভুয়া জনতা টিভির মালিক আতাউল্লাহ খান আতা। এই ব্যাপারে পীর ডাক্তার হারুনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে বার বার এড়িয়ে যান এবং পরবর্তীতে প্রতিবেদকের ফোনের কোন সাড়া দেননি। সচেতন মহলের দাবি অবিলম্বে ভন্ড পীর ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রিধারী হারুন কে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাশ্তির ব্যবস্হা করা হোক।