মোঃ কামরুল হাসান কাজল ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ আর মাত্র কয়েকদিন পরে পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই ঈদুল আজহায় কোরবানি দিতে সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা কোরবানির পশুর মাংস কাটার কাটার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউবা কিনছেন নতুন দা, বটি, চাকু। আবার কেউ বা পুরনো দা, বটি চাকু ধারালো করতে ভিড় করছেন কামারপল্লীতে।
আজ মঙ্গলবার (১১ই জুন) ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বাজারের কামারপল্লীতে আসা দা,বটি ধার দিতে আসা ব্যক্তিসহ কামারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। টুং টাং শব্দে মুখরিত হয় ওঠেছে কামারপাড়া। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদ এলে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। কুরবানির পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম তৈরিতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কামাররা।
সরজমিনে গিয়ে ভূরুঙ্গামারী বাজারের বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, তপ্ত লোহা গলিয়ে চলছে দা, বটি, ছুরি ও চাকু তৈরির কাজ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরাঙ্গা লোহা। কেউ পোড়া দা ও ছুরিতে দিচ্ছেন শান। কেউবা হাঁপর টেনে বাতাস দিচ্ছেন। দম ফেলারও সময় নেই তাদের। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান কামাররা। দা, ছুরি, চাকু ও বটির বেচাকেনা বেড়েছে।
কারিগররা জানান, এবছর প্রতি পিছ চাকু ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায় চাপাতি, জবাই ছুরি ৮০০-১২০০ টাকা বিক্রি করছেন। এছাড়াও পুরনোসব যন্ত্রপাতি শান
দিতে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
ভূরুঙ্গামারী বাজারের কামার মজিবর জানান, সারা বছরই আমাদের মোটামুটি বিক্রি হয়। তবে কোরবানি ঈদে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। এই সময় ভালোই আয় হয়। যা দিয়ে মুটামুটি ভাবে দিন চলে যায়।
ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের (কামারটারি) বাসিন্দা দুলু কামার জানান, কোরবানীর ঈদকে ঘিরে পশু জবাই থেকে শুরু করে কোরবানীর মাংস রান্নার চুড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রয়োজন হয়। বছরের অন্যান্য সময় কাজ কম থাকলেও এ সময়ে আমরা
কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ি।
পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর কামার জানান, সারা বছরই কষ্ট করে চলতে হয়। কুরবানির ঈদ এলে আমাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদের রাত পর্যন্ত নির্ঘুম কাটাতে হয়।
এক সময় এ পেশায় অনেক লোক ছিল কিন্তু এখন আগের মতো কাজের লোকও মিলছে না। বাপ-দাদার ব্যবসা কোনরকম টিকিয়ে রেখেছি।
আবুল হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, ৩০০ টাকায় একটি চাকু কিনেছি। আর একটি দা ও একটি বটি ধার দিতে নিয়েছে ১৫০ টাকা। তারা বলেন মনে হচ্ছে দাম একটু বেশি তারপরও কি করবো সামনে ঈদ।
অন্যান্যরা জানান, কোরবানি ঈদে তারা প্রতিবছর দা, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেন।বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। তাদের আশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।