হাসান আহমেদ প্রান্ত নারায়ণগঞ্জ।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি আবাসিক ভবন দশ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে পুরো ভবনজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রটিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি। আইন অনুযায়ী আবাসিক ভবনে কোনো প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার সুযোগ নেই, তবুও সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভেতরেই কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক ভবনেই রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচলনা করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি সেই ভবনের ৬ষ্ঠ তলার বেলকনিতে এক কলেজ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী উত্তরপাড়া এলাকার (ব্লক: এ, হোল্ডিং: ৪২৮/১২) ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির নিচ তলায় রয়েছে দুটি মুদি দোকান। গেট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় একটি ব্যানারে বড় করে লেখা রয়েছে ‘জিনিয়াস গ্রুপে আপনাকে স্বাগত’ এর পাশেই রয়েছে একটি অফিস। ভবনটির ২য় তলায় রয়েছে জিনিয়াস গ্রুপের অফিস এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ৩য় তলায় রয়েছে জিনিয়াস তারবিয়াতুল উম্মাহ্ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মাদরাসা। ৪ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত প্রতি ফ্লোরে মেস পরিচলনা করেন জাহিদ। ৮ম তলা ও ছাদে রয়েছে পিজ্জা কিং ও লাভবার্ড ক্যাফে নামে দুটি রেস্টুরেন্ট।
এদিকে ওই ভবনে জিনিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে ভবনটিতে ওই স্কুলের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি। তবে, ওই ভবনের পাশেই একটি টিনশেড বাড়িতে জিনিয়াস স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সরেজমিনে ওই ভবনে গিয়ে জাহিদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে শিকদার মো. আল আমিন নামে একজন জানিয়েছেন, জাহিদ বাইরে আছেন। অন্যদিকে এদিন সকাল থেকেই জাহিদের ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি (০১৯৩৮***৫৮) বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে, বহু চেষ্টার পরে এদিন দুপুরে অপর একটি নাম্বারে (০১৯৮৮***৪৪) কল করলে পাওয়া যায় জাহিদকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌথভাবে ভবনটির মালিক সবুজ শেখ এবং ফিরোজ নামে দু’জন। বিষয়টি নিয়ে ভবন মালিক ফিরোজের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ক্লিক নারায়ণগঞ্জকে বলেন, জাহিদকে বাড়িটি দশ বছরের চুক্তিতে ভাড়া দেয়া হয়েছে। ভবনে কোনো অসামাজিক কাজ বা বেআইনি কিছু করা যাবে না বলে চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এখানে বেআইনি কিছু করলে তার সমস্ত দায় দায়িত্ব জাহিদের।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে আবাসিক ভবন ভাড়া দিয়েছি এখন সে যদি এটা কমার্শিয়াল করে নেয়, সেটা তার বিষয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দশ বছরের চুক্তিতে ভবনটি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদুল ইসলাম ক্লিক নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি ভবনটি ভাড়া নিয়েছি। এ বিষয়ে কোনো কথা থাকলে ভবন মালিকের সাথে বলেন।
পরে ভবন মালিকের বক্তব্য তাকে জানালে তিনি দাবি করেন, ‘ভবন মালিক মিথ্যা বলছেন’।
ভবনটির ৮ম তলা ও ছাদে রেস্টুরেন্ট থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাহিদ ক্লিক নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘৬ মাস ধরে রেস্টুরেন্ট বন্ধ আছে’। তবে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে রেস্টুরেন্টটি সচল রয়েছে। এমনকি ওই রেস্টুরেন্টে ঢুকলে, ক্লিক নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধিকে ‘কি খাবেন?’ বলে খাবারের অফারও করা হয়। সচল রেস্টুরেন্ট সহ ভবনটির প্রত্যেক ফ্লোরের ছবি ও ভিডিও ক্লিক নারায়ণগঞ্জের কাছে সংরক্ষিত আছে।
‘৬ মাস ধরে রেস্টুরেন্ট বন্ধ’ দাবির প্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্ট সচল থাকার প্রমাণ আছে জানালে জাহিদ এই প্রতিবেদককে তার সাথে দেখা করার প্রস্তাব করেন। জাহিদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পরেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন ক্লিক নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজউকের অথরাইজড অফিসার (জোন-৬/৩) মো. রাজিবুল ইসলাম ক্লিক নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আবাসিক ভবনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকে সেটি অন্যায় করেছে। এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই যথাযথ ব্যাবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল দশটার দিকে ওই ভবনের ৬ষ্ঠ তলার বেলকনিতে এক তরুণের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মামুন ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেন। মৃত ওই তরুণের নাম আশরাফ চৌধুরী সজিব। তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি টেকনিকাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।