স্টাফ রিপোর্টার
বাংলা একাডেমি এর সভাপতি, আলোকিত নারী ও দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর ৭৭ তম শুভ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় নারী সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, একগুচ্ছা ফুলেল শুভেচ্ছা, কেককাটা ও স্মৃতিচারণ আজ রাত ৮ ঘটিকায় শ্যামলীস্থ নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় নারী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংক এর এডিশনাল ডিরেক্টর, গীতিকার ও পুথিসম্রাজ্ঞী কবি হাসিনা মমতাজ হাসি, সাধারণ সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক নাসরিন ইসলাম শেলী, সংগঠনের সদস্য কবি নেক লায়লা পারভীন ও কবি নূরুল শিপার খান ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। আনন্দঘন পরিবেশে কেক কাটার মাধ্যমে জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
এসময় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর জীবন সঙ্গী শ্রদ্ধের আনোয়ার হোসেন খান এর উপস্থিতি জন্মদিন এর আনন্দ আয়োজন কে পূর্নতা দান করে।
শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন সংগঠন এর সভাপতি হাসিনা মমতাজ হাসি বলেন বাংলা সাহিত্যে সেলিনা হোসেন এর অবদান স্মরনীয় হয়ে থাকবে, তাঁর অবদানে আমরা নারীরা গর্ববোধ করি, নেতৃবৃন্দ তাঁর সুস্বাস্থ্য, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন আবেগাপ্লুত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় “জাতীয় নারী সাহিত্য পরিষদ” এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকল নারীকে নিজ নিজ অবস্থান হতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন আহবান জানান। পাশাপাশি তিনি “জাতীয় নারী সাহিত্য পরিষদ” এর সাফল্য কামনা করে বলেন নারীদের জাগাতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আরো সচেতন করতে হবে।
উল্ল্যেখ্য ১৪ জুন বুধবার, দেশ বরেণ্য কথা সাহিত্যিক বাংলার , আলোকিত নারী সেলিনা হোসেন এর ৭৭ তম শুভ জন্মদিন
তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রামে। বাবার নাম একে মোশাররফ হোসেন এবং মায়ের নাম মরিয়মন্নেসা বকুল। সাত ভাইবোনের মধ্যে সেলিনা হোসেন চতুর্থ। তিনি একাধারে উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করছেন। শিশু সাহিত্য এবং গবেষণায়ও রেখেছেন অনন্য স্বাক্ষর। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ও গল্পে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সুখ-দুঃখের উপাখ্যান হয়ে উঠেছে তার লেখনিতে।তার দুটি গ্রন্থ ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ এবং ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ দিয়ে চলচ্চিত্র এবং কয়েকটি গল্প নিয়ে নাটক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে তার‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়।
কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্যের ভুবনে প্রবেশ করলেও ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি বেছে নেন কথাসাহিত্যকে। মূলত ছাত্রজীবনের বামপন্থি রাজনীতি সেলিনা হোসেনের লেখালেখির ধারা নির্মাণ করে দেয়। জীবন ও বাস্তবতার আলেখ্য হিসেবে তার লেখাগুলো পাঠকের হৃদয়ে আলাদাভাবে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় সেলিনা হোসেনের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’। তার প্রথম উপন্যাস ‘জলোচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তার ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ বাংলা ভাষার নিদর্শন চর্যাপদ ও চর্যাকারদের নিয়ে রচিত প্রথম উপন্যাস।সেলিনা হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কানাড়ি, রুশ, মালে, মালয়ালম, ফরাসি, জাপানি, ফিনিশ, কোরিয়ান প্রভৃতি ভাষায় সেলিনা হোসেনের বেশ কয়েকটি গল্প অনূদিত হয়েছে।র্
সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু বাংলা একাডেমিতে; গবেষণা সহকারী হিসেবে। ২০ বছরের বেশি সময় তিনি ‘ধানশালিকের দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৭ সনে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। তিনি শিশু একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।
সেলিনা হোসেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪ এবং শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য এ বছর আনন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ লাভ করেন। ২০১০ খিষ্টাব্দে কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা।