আব্দুল মজিদ (স্টাফ রিপোর্টার)শনিবার সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া হাট সাপ্তাহিক হাট রূপান্তরিত হয় কোরবানির পশুর হাটে। বেচাকেনা হয়েছে অন্যদিনের তুলনায় বেশি।
কাজিপুর উপজেলার পশুর সবচেয়ে বড় হাট হিসেবে পরিচিত নাটুয়ারপাড়া হাট। প্রতি শনিবার সেখানে হাট বসে। শনিবার ছিল কোরবানি ঈদের আগের শেষ হাট। এ কারণে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে হাটটিতে। এবারও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন হাটটিতে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা। মূলত সাধারণ দিনে সেখানে হাট শুরু হয় সকাল এগারোটা থেকে। তবে শনিবার (১৫ জুন) সকাল নয়টা থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর কেনাবেচা জমে ওঠে দুপুর থেকেই।
সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ নিয়ে আসা হয় ওই হাটে। আর ক্রেতা হিসেবে হাটে পশু কিনতে আসেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। হাজার হাজার পশুর মধ্য থেকে নিজের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী পশু কিনতে পারেন ক্রেতারা। মূলত স্থানীয়ভাবে বাড়িতে লালন-পালন করা হয় এমন গরু বেশি বিক্রি হয় এই হাটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হাটটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। প্রতি হাটেই হাজার হাজার গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষ বিক্রি হয়। আর কোরবানি ঈদের আগের হাটে কেনাবেচা হয় সবচেয়ে বেশি। কোরবানির পশু কেনাবেচায় মানুষের আস্থার হাটে পরিণত হয়েছে এটি।
শনিবার (১৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা নিয়ে বসেছে হাট। হাজার হাজার গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। হাটের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে আলাদা জায়গায় ছাগল বিক্রি হচ্ছে। এ সময়টায় ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পশু ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা দামের গরু আনা হয়েছে এই হাটে। আর ছাগলের দাম ৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
হাটে বিপুলসংখ্যক পশুর উপস্থিতি দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার চাহিদার বিপরীতে উপজেলায় পশুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। হাটে আসা ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই থেকে আড়াই মণ মাংস হতে পারে, এমন মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ওই আকারের গরুর দামও তুলনামূলক বেশি। এবার বড় গরুর চাহিদা বেশ কম। দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ কম দামের গরু কিনে কোরবানি দিতে চাইছেন বলে জানান তাঁরা।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা থেকে সেখানে গরু কিনতে যান আশরাফুল ইসলাম সহ আরও কয়েকজন। ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ মণের বেশি মাংস হবে এমন একটি কালো গরু কেনেন তাঁরা। হাসিল মিটিয়ে দেওয়ার পর কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। তবে দরদাম করে কিনতে পারলে পছন্দের মধ্যে সেরা গরুটি কেনা যাচ্ছে। হাটটিতে শনিবার হাজার হাজার গরু-ছাগল উঠলেও সবার দৃষ্টি ছিল মাঝারি গরুর দিকে। বিশাল গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে আড়াই লাখ টাকা। পাশেই ছিল একই মালিকের আরেকটি বড় গরু। ওই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে দেড় লাখ টাকা।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর কুরবান আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণত এই হাট থেকেই গরু কিনি। কিন্তু এবার দেখছি গরুর দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি। এরপরও বেশ ভালো ভালো গরু উঠেছে হাটে।’ গরুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একটি গরু দেখিয়ে আনোয়ার হোসেন নামের স্থানীয় এক বিক্রেতা জানান, ‘এটি নিজের বাড়ির গরু। গোখাদ্যের দাম এখন অনেক বেশি। একটা গরু বড় করতে বেশ খরচ পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে গরুর দামও বেশি।’ এবারের কোরবানি ঈদে চাহিদার তুলনায় গরুর জোগান বেশি থাকায় মানুষ তুলনামূলক কম দামে পশু কিনতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন কাজিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: দিদারুল আহসান। তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ হিসেবে পশুর দাম বেশ কম। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর উৎপাদন অনেক বেশি।
হাটে আনা কোনো পশু অসুস্থ হলে এগুলো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। এ ছাড়া জাল নোট শনাক্তকরণে কাজ করছে ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রতারক ও জাল নোটের বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে মাইকে প্রতিনিয়ত প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন তথ্য। হাসিল আদায় সহজ করতে হাটের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয়েছে ১০টি বুথ। একেকটি বুথে কাজ করছেন তিন থেকে পাঁচজন ব্যক্তি। একটি বুথের হাসিল আদায়কারী মনিরুল আলম বলেন, ‘সকাল থেকেই কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে মূল কেনাবেচা হয় দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত। কয়েক হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হবে এক দিনে। ঢাকা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু কিনতে সেখানে আসছেন ক্রেতারা।