স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জ তাহিরপুর নির্মাণাধীন জাদুকাটা সেতুতে এক ড্রেজারেই ছয় কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের পরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বালু বোঝাই ইঞ্জিনচালিত একটি বলগেট ট্রলার ও দুটি অবৈধ ড্রেজারসহ আরও একটি বলগেট ট্রলার জব্দ করার পরও রহস্যজনক কারণে কোনো আইনি ব্যবস্থায়ই নেয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, জাদুকাটা নদীর ওপর ‘শাহ আরেফিন (রহ.) ও অদ্বৈত মহাপ্রভু’ মৈত্রী নামে সেতু নির্মাণ করছে সরকার। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ওই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।
তমা কনস্ট্রাকশনের সেতু নির্মাণ কাজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিয়া মো. নাছির অভিযোগ করেন, নির্মাণাধীন সেতুর স্পেন-১২ এর স্টেজিংয়ের পাশে ১৩ জুন সারা রাত ড্রেজারে বলগেট ট্রলারে বালু লোড করে পরদিন ১৪ জুন ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়েন ড্রেজারের মালিক ও শ্রমিকরা। পরে বালু লোড বলগেট ট্রলার এসে ধাক্কা দেওয়ায় সেতুর স্টেজিংয়ের ড্রাইভ করা অধিকাংশ লোহার পাইপ ভেঙে পড়ে যায় এবং স্টেজিং লাগানো অ্যাঙ্গেল জয়েস্ট স্টেজিং থেকে ছুটে যায়। এতে করে স্টেজিং অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
যে কারণে জাদুকাটা নদীতে ধেয়ে আসা হালকা স্রোতের তোড়ে স্টেজিং ভেঙে পড়ে যায়। এতে করে সেতুর কাজ এক বছর পিছিয়ে যাবে বলে ধারণা। আর স্টেজিং ও গার্ডার বাবদ এক ড্রেজারের কারণেই প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ১৪ জুন থানায় এ ব্যাপারে বালুবাহী বলগেট ট্রলার ও ড্রেজার আটক এবং বালু ও ড্রেজার মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। কিন্তু থানা পুলিশ বালুবাহী বলগেট ও ড্রেজার জব্দ করেনি।
তিনি আরও বলেন, তাহিরপুর থানার ওসির নির্দেশে থানার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই বাচ্চু মিয়া কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে গিয়ে সেতুর পাশ থেকে বালুবিহীন খালি একটি বলগেট ট্রলার জব্দ করে ওসির জিম্মায় দিয়েছেন। বালু কিংবা অবৈধ ড্রেজারবাহী বলগেট ট্রলারটি রহস্যজনক কারণে এএসআই জব্দ করেননি।
বুধবার দুপুরে জাদুকাটা নদী-১ এর ইজারাদার সোহাগ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রতন মিয়া দাবি করেন, সেতুতে দুর্ঘটনাকবলিত বালু বোঝাই বলগেট ট্রলার ও ড্রেজারের মালিক তারই শ্যালক বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের জাকির হোসেন ডালিমের। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে লেখালেখির কী আছে?
জাদুকাটা নদীতে সোহালা থেকে শিমুল বাগান পর্যন্ত নদীর দুই তীরে শতাধিক ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলন করা হয়। এসব ড্রেজারে বালু-পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের কোনো অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই ইজারাদার বলেন, আমরা নদীর কিছু জায়গা খননের জন্য জেলা প্রশাসনসহ বিআইডব্লিউটির প্রতিনিধির কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েছি।
জাদুকাটা-২ এর ইজারাদার রিয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদ সদস্য মজিবুর রহমানের কাছে জাদুকাটা নদীতে ড্রেজার মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের কোনো অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
অভিযোগ অস্বীকার করে বুধবার তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বললেন, জাদুকাটা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বালুবাহী বলগেট ও ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বললেন, জাদুকাটায় ড্রেজারে বালু-পাথর উত্তোলন করার জন্য প্রশাসন থেকে ইজারাদার বা কাউকেই কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ড্রেজারে বালু-পাথর উত্তোলন অবৈধ বলেও জানান তিনি।