স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ তাহিরপুর জাদুকাটা ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ দৈনিক সংবাদ কে বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের নজরে পড়েছে। এরপরই আমি সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত জাদুকাটা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন বন্ধ করাতে এবং ড্রেজার মেশিনগুলো জব্দ করতে। এমনকি ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে জাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনকালে ২২ লাখ টাকার ড্রেজার মেশিনসহ আহসান হাবিব নামে এক ড্রেজার মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে সুনামগঞ্জ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার আহসান সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ঘাগড়া গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে। এর আগে আহসানসহ অপর তিন ড্রেজার মালিকের নাম উল্লেখ করে ও ৪ থেকে ৫ অজ্ঞাতনামা ড্রেজার মালিককের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার বিকালে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল জানায়, পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ এহসান শাহর নির্দেশে সোমবার বিকালে তাহিরপুরে খনিজ বালু পাথর সমৃদ্ধ সীমান্ত নদী জাদুকাটায় পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু পাথর উত্তোলনরত ড্রেজার মেশিন ও ড্রেজার মালিকদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনকালে ইঞ্জিনচালিত (স্টিলবডি) ট্রলারসহ ড্রেজার মেশিন জব্দ করে থানার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ড্রেজার মেশিনে থাকা ড্রেজার মালিক আহসান হাবিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় অপর তিন ড্রেজার মালিক তাহিরপুর উপজেলার নাগরপুর (টেন্ডারপাড়ার) মৃত সুরুজ হাজির ছেলে আব্দুল কাইয়ুম, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ার চর গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তারা মিয়ার ছেলে ইকরাম হোসেন, একই গ্রামের মৃত জব্বার মিয়ার ছেলে ও সাবেক চেয়ারম্যান তারা মিয়ার ভাই সেন্টু মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ও শ্রমিকরা কৌশলে পালিয়ে যান। উল্লেখ্য, জেলা বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৪৩১ বাংলা সালের ১ বৈশাখ থেকে উপজেলার কামড়াবন্দ (পূর্বের সাদের খলা) গ্রামের হাজি তাহের মিয়ার ছেলে সোহাগ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রতন মিয়া জাদুকাটা নদী-১ ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদ সদস্য উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে রিয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান তালুকদার জাদুকাটা নদী-২ বালু মহাল ইজারা নেন।
এরপর ইজারা শর্ত ভঙ্গ করে বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মহালের নির্ধারিত সীমানার বাইরে জাদুকাটা নদীর বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ বিধ্বংসী শতাধিক অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দিনরাত বালু-পাথর উত্তোলন করাতে থাকেন ইজারাদাররা।
এদিকে জাদুকাটা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুর স্পেন-১২ এর স্টেজিংয়ের পাশে গেল ১৩ জুন সারারাত ইজরাদার রতন মিয়ার শ্যালক বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ার চর গ্রামের জাকির হোসেন ডালিমের মালিকানাধীন একটি ড্রেজার দিয়ে বলগেট ট্রলারে বালু লোড করে। পরদিন ১৪ জুন ভোররাতে ঘুমিয়ে পড়েন ড্রেজারের মালিক ও শ্রমিকরা। পরে বালু লোড করা বলগেট এসে ধাক্কা দেওয়ায় সেতুর স্টেজিংয়ের ড্রাইভ করা অধিকাংশ লোহার পাইপ ভেঙে পড়ে যায় এবং স্টেজিং লাগানো অ্যাঙ্গেল জয়েন্ট স্টেজিং থেকে ছুটে যায়। স্টেজিং অনেক দুর্বল হয়ে যাওয়ায় জাদুকাটা নদীর হালকা স্রোতে স্টেজিং ভেঙে পড়ে যায়। এতে সেতুর কাজ এক বছর পিছিয়ে যাবে বলে ধারণা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর স্টেজিং ও গার্ডার বাবদ এক ড্রেজারের কারণেই প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন তমা কনস্ট্রাকশনের সেতু নির্মাণ কাজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিয়া মো. নাছির।
১৪ জুন থানায় এ ব্যাপারে বালুবাহী বলগেট ট্রলার ও ড্রেজার আটক এবং বালু ও ড্রেজার মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। পরে শুধুমাত্র একটি স্টিল বডি বলগেট জব্দ করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় ইজারাদার রতন মিয়া দাবি করেন, সেতুতে দুর্ঘটনাকবলিত বালুবোঝাই বলগেট ও ড্রেজারের মালিক তারই শ্যালক বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের জাকির হোসেন ডালিমের। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে লেখালেখির কী আছে? এ নিয়ে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ, ডকুমেন্ট সংগ্রহের পর গেল ১৯ জুন ‘নির্মাণাধীন জাদুকাটা সেতুতে এক ড্রেজারেই ক্ষতি ৬ কোটি টাকা’ শিরোনামে ‘নির্মাণাধীন জাদুকাটা সেতু এক ড্রেজারেই ক্ষতি ৬ কোটি টাকা’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বাদী সংগঠন ও সরকারের ওপর মহলের নজর পড়ে। এরপর থেকেই জাদুকাটা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজারে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে সোমবার বেলা ১১টা থেকে ফের জাদুকাটায় কয়েকটি অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু পাথর উত্তোলন শুরু হলে জেলা পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে ড্রেজার মালিকদের গ্রেফতার ও ড্রেজার মেশিন জব্দ করে। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলা বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক ১৪৩১ বাংলা সালে জাদুকাটা ১ ও ২ বালু মহাল ইজারাকাণ্ডে সিন্ডিকেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারের ইজারামূল্য, ভ্যাট আয়করসহ প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বঞ্চিত করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার (সদস্য অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, ইজারা শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলন করলে ড্রেজার মেশিন জব্দ ও ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বল