চুয়াডাঙ্গায় স্ক্যাবিসের মারাত্মক সংক্রমণ: প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী, উদ্বেগে জনস্বাস্থ্য

মোঃ নাঈম উদ্দীন
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি
দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।

চুয়াডাঙ্গায় চর্মরোগ স্ক্যাবিসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু, নারী, বয়স্কসহ সব বয়সী মানুষ এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবারে।

প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে স্ক্যাবিস ও অন্যান্য চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী শুধু স্ক্যাবিস বা খোস–পাঁচড়ার মতো চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন।

আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে নতুন ও পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলার করিডোর ও বারান্দাজুড়ে রোগীর উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন, ভেতরে প্রবেশের অপেক্ষায় অসংখ্য রোগী। ভিড় সামাল দিতে হাসপাতালের কর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। সদর উপজেলার বাসিন্দা মোছা. রিনা বেগম বলেন, “প্রথমে ছেলেটার হাতে চুলকানি শুরু হয়, এখন পুরো পরিবার আক্রান্ত।

রাতের বেলা ঘুমানোই কষ্টকর হয়ে গেছে।” আলমডাঙ্গা উপজেলার রফিকুল ইসলাম একই কথা বলেছেন, “কয়েক দিন ধরে চুলকানি বাড়ছিল।

প্রথমে ভেবেছিলাম তেমন কিছু না, এখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে এসেছি।” মাদরাসার ছাত্র তানহা জানান, “প্রায় দুই মাস ধরে দুই হাতের কনুইয়ের ভাঁজে চুলকানি।

আমার আরও চার–পাঁচজন সহপাঠীর একই উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ৬-৭ দিন পরপর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি, কিন্তু কমছে না।”

আরেক রোগী ইমরান অভিযোগ করেন, ডাক্তার শুধু ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, যা বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, কিন্তু রোগ সারছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লাইলা শামীমা শারমিন বলেন, “স্ক্যাবিস দ্রুত সংক্রমিত হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ পুনরায় ফিরে আসে।”
তিনি আরও জানান, গরম ও বর্ষাকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন, ফলে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় জটিলতা বাড়ে।

সময়মতো চিকিৎসা না পেলে কিডনি ও ত্বকের জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডা. শারমিন অক্টোবর মাসের শেষদিকে প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন।

আবাসিক মাদরাসা, ছাত্র হোস্টেল ইত্যাদি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দ্রুত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ ও ওষুধ সংকট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “স্ক্যাবিস ও দাউদ- উভয়ই অত্যন্ত সংক্রামক রোগ এবং আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।” তিনি মনে করেন, “আগেও এসব রোগ ছিল, তবে বর্তমানে বাজারের ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে।”

ডা. বিশ্বাস আরও নিশ্চিত করেছেন, আজও প্রায় ১৫০ এর অধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি জানান, “স্ক্যাবিসের জন্য যে তরল ওষুধ, সেটির সংকট রয়েছে।

অন্যান্য ওষুধ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আছে। অতি শিগগিরই ওষুধের সংকট কেটে যাবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্ক্যাবিসের এই প্রাদুর্ভাব চুয়াডাঙ্গার জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে এই মুহূর্তে সময়মতো চিকিৎসাগ্রহণ ও ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

শেয়ার করুনঃ