জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন ও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ র‍্যালি

 

মোঃ নাঈম উদ্দীন
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি
দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।

​আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধকরণ ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা আজ রবিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৫-দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

​জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিশাল র‍্যালি বের হয়। জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনের নেতৃত্বে র‍্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এ সময় শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাদের ৫-দফা দাবি সংবলিত স্লোগান ও বক্তব্য দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নেতাকর্মীরা ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন চাই’, ‘গণভোটের মাধ্যমে সনদকে আইনি ভিত্তি দাও’, ‘জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

​পরে, জামায়াতে ইসলামীর চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম-এর কাছে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে স্মারকলিপিটি প্রদান করেন।

​স্মারকলিপিতে জামায়াতে ইসলামী ৫টি মূল দাবি উত্থাপন করেছে, যা তাদের মতে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অপরিহার্য।

দাবিগুলো হলো:

​১. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট: আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন করা। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

২. আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু: আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু করা।

৩. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা: অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

৪. ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিচার: ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।

৫. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ: স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

​স্মারকলিপিতে জামায়াতে ইসলামী উল্লেখ করে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং সরকার ইতোমধ্যে ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রস্তুত করেছে।

জামায়াত এই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট আয়োজনের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে।
​স্মারকলিপি প্রদান শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন সরকারের কাছে সবগুলো দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানান।

তিনি বলেন, এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার ক্ষেত্রে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করবে।

​কর্মসূচিতে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল এবং আব্দুল কাদের, শফিকুল ইসলাম বকুল, দারুস সালাম, হাসিবুল ইসলাম, সাগর, আমিরুল ইসলাম সহ অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

​স্মারকলিপি প্রদানের পর নেতাকর্মীরা পুনরায় শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন ফুটবল মাঠে ফিরে আসেন এবং সেখানে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুনঃ