পদোন্নতির জট ও বৈষম্য দূরীকরণে চুয়াডাঙ্গায় সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৫ দফা দাবি

মোঃ নাঈম উদ্দীন
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি
দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।

পদোন্নতির দীর্ঘদিনের জট, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বৈষম্য দূরীকরণসহ মোট পাঁচ দফা দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।

শিক্ষক দিবসের দিনে ফুল নয়, নিজেদের ন্যায্য অধিকার ফেরতের দাবি জানাতেই তাঁরা এই সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।

আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই গুরুত্বপূর্ণ সভা।

শিক্ষকরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, শিক্ষকদের এই বঞ্চনা দূরীকরণ এবং দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থেই তাঁরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের করুণ চিত্র তুলে ধরেন।

তাঁরা জানান, সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এদের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশের।

এই সীমিত সুযোগের কারণে বহু শিক্ষক প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় একই পদে থেকে অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে তাঁদের পেশাগত মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং শিক্ষাদানেও উৎসাহ হারাচ্ছেন।

বক্তারা মনে করেন, শিক্ষকদের এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনা প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার সার্বিক মানকে ব্যাহত করছে।

বক্তারা সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর বর্তমান সরকার যে শিক্ষা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় দ্রুত মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।

শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর করে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:

১. স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা: শিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও কার্যকর পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. চার স্তরীয় পদসোপান প্রবর্তন: সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রি পদকে নবম গ্রেডে উন্নীত করে শিক্ষকদের জন্য চার স্তরীয় পদসোপান (প্রমোশনের ধাপ) প্রবর্তন করা।

৩. মাধ্যমিক দপ্তরগুলোর স্বতন্ত্র্য রক্ষা: আঞ্চলিক উপপরিচালকের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংরক্ষণসহ মাধ্যমিক দপ্তরগুলোর স্বতন্ত্র্য ও কার্যকারিতা রক্ষা করা।

৪. শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন: বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সকল শূন্যপদে দ্রুততার সাথে নিয়োগ, পদোন্নতি ও শিক্ষকদের পদায়নের ব্যবস্থা করা।

৫. বকেয়া মঞ্জুরী আদেশ দ্রুত প্রদান: শিক্ষকদের বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের মঞ্জুরী আদেশ অবিলম্বে প্রদান করা।

আলোচনা ও বক্তাদের আহ্বান
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অ.দা.) জেসমিন আরা খাতুন।

সহকারী শিক্ষক সাজিদ রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সহ জেলা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অন্যান্য সদস্যরা।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের উত্থাপিত দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
তাঁদের মতে, এই ৫ দফা দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হলে একদিকে যেমন শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর হবে, অন্যদিকে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অবিলম্বে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেয়ার করুনঃ