বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত: টেকসই সমাজ গঠনে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের আহ্বান

 

মোঃ নাঈম উদ্দীন
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি
দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।

বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট, সামাজিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অসমতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই সমাজের যে স্বপ্ন বিশ্ব দেখছে, সেই স্বপ্নপূরণের অদৃশ্য সেতুর কারিগর হলেন শিক্ষকরা।

প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের এই অপরিমেয় অবদানকে সম্মান জানাতে পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস।

এ বছর, কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা শুধু জ্ঞান বিতরণকারী নন, বরং তাঁরা ‘ভবিষ্যতের স্থপতি’— এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে শিক্ষকদের ক্ষমতায়নের জোরালো দাবি উঠেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনি মাষ্টারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনটি ছিল গতানুগতিক আলোচনার চেয়ে ভিন্ন, যেন এক নতুন সামাজিক অঙ্গীকারপত্র পাঠ।

তিনি তাঁর আবেগময় বক্তব্যে তুলে ধরেন শিক্ষকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদার প্রশ্ন। তিনি বলেন, “যদি একটি রাষ্ট্র সত্যিই টেকসই ভবিষ্যৎ চায়, তবে প্রথমে তার শিক্ষককে শক্তিশালী করতে হবে।

একজন ক্ষুধার্ত বা অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক কখনোই প্রজন্মকে জলবায়ু সহনশীলতা বা সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো জটিল ধারণা শেখাতে পারবেন না।”

অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনি মাষ্টার জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষকদের কেবল পাঠ্যপুস্তক পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে, তাঁদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা উপকরণ এবং নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে।

শিক্ষকদের এই ক্ষমতায়নই নিশ্চিত করবে যে তাঁরা শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়েই শিক্ষার্থীদেরকে একটি পরিবেশ-বান্ধব ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তাঁরা স্বীকার করেন যে, স্থানীয় পর্যায়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষক সমাজের প্রতি আস্থার উপর।

পর্ষদ একজন সদস্য বলেন, “আমরা শুধু অবকাঠামো তৈরি করি, কিন্তু শিক্ষকরা তৈরি করেন মানুষ। এই মানুষরাই একদিন আমাদের সমাজকে স্থিতিশীলতা দেবে। তাই শিক্ষকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”

অন্যদিকে, শ্রেণিকক্ষের সম্মুখসারির যোদ্ধারাও তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। শিক্ষক মশিউর, আকলিমা, জেসমিন, শরীফ ও রুপা— প্রত্যেকেই তাঁদের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

শিক্ষক আকলিমা বলেন, “নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা চাইছি শিক্ষার্থীরা যেন হাতে-কলমে শেখে, প্রকৃতিকে ভালোবাসে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী রিসোর্স এবং শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত কর্মশালা।

আমাদের ক্ষমতায়ন মানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের পথকে মসৃণ করা।” শিক্ষিকা রুপা বলেন, এই দিবসটি কেবল সম্মান জানানোর নয়, এটি আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সুযোগের দাবি তোলার দিন।

আলোচনা শেষে শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা একমত হন যে, টেকসই সমাজ গঠন একটি বহু-মাত্রিক কাজ, যার মূলে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা।

আর এই শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের বিচ্ছিন্নতা ও বঞ্চনা দূর করে তাঁদেরকে সামাজিক ও পেশাগতভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে হবে।

কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের এই আয়োজন প্রমাণ করল—বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র একটি বার্ষিক প্রথা নয়, এটি শিক্ষক সমাজের প্রতি রাষ্ট্রের, সমাজের এবং আগামী প্রজন্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের আহ্বান।

এই বিনিয়োগ শিক্ষকের মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন, যা একটি উন্নত, স্থিতিশীল ও টেকসই বিশ্ব গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি।

শেয়ার করুনঃ