খন্দকার ছদরুজ্জামান,
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি;
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে রক্তাক্ত হামলার ঘটনা। আপন ভাইয়ের হাতে ভাই, ভাবি ও দুই ভাতিজা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। পারিবারিক কলহ ও দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। আহতরা হলেন—কুমড়ি গ্রামের মৃত আকবর শেখের ছেলে হেলাল শেখ (৪০), তার স্ত্রী শাহানারা বেগম (৩৫), ছেলে রহমতুল্লাহ (১৫) ও ছোট ছেলে হামরান শেখ (১১)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সকালে হেলাল শেখের ছোট ছেলে হামরান শেখ মুখ ধোয়ার জন্য টিউবওয়েলে গেলে তার কাকা বিল্লাল শেখ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে টিউবওয়েল থেকে সরে যেতে বলেন। তখন ছেলেটি কাকাকে জানায়, “মুখটা ধুয়ে যাচ্ছি।” এই কথার জের ধরে বিল্লাল শেখ রাগে গিয়ে হামরানকে মারধর শুরু করেন। পরে হামরানের মা শাহানারা বেগম, বাবা হেলাল শেখ ও ভাই রহমতুল্লাহ এগিয়ে এলে তাদের ওপরও চড়াও হয় বিল্লাল শেখ, তার স্ত্রী রুপালি বেগম, ছেলে আসাদুল্লাহ, ভাই আলী রাজ ও আত্মীয় মিটু শেখ।
এক পর্যায়ে সবাই মিলে লাঠি, লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করলে হেলাল শেখ ও তার পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।পরবর্তীতে হেলাল শেখ বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছেন।
হেলাল শেখ বলেন, “আমার ছেলেকে সামান্য কারণে এমনভাবে পেটানো হবে ভাবিনি। ভাইয়ের এমন আচরণ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আগে থেকেই কিছু পারিবারিক জমি-বিষয়ক দ্বন্দ্ব ছিল। সেই ক্ষোভই হয়তো আজ এই হামলার কারণ।” এদিকে স্থানীয়দের মতে, দুই ভাইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এর আগেও কয়েকবার পারিবারিক বৈঠক বসেছিল, কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি। এলাকাবাসী বলছে, এই ঘটনায় গ্রামের মানুষ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, “একটি এজাহার পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহত পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং পরিবারের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, “এই ধরনের পারিবারিক সহিংসতা সমাজে অস্থিরতা বাড়ায়। পুলিশ যেন দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।” লোহাগড়ার কুমড়ি গ্রামে এখন এই ঘটনাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আপন ভাইয়ের হাতে ভাই ও তার পরিবারের ওপর নৃশংস হামলা পুরো এলাকায় গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সৃষ্টি করেছে।